গর্ভবতী হওয়ার ৩০ বছর পর প্রসব, জন্ম নিল ‘স্টোন বেবি’!

৬০ বছর বয়সে হঠাৎ প্রসব যন্ত্রণা উঠল এক মহিলার। না, এতেও তেমন অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যদি বলা হয় সদ্যজাত শিশু সন্তানটির বয়স ৩৭ বছর! অর্থাৎ জন্মের আগেই মাতৃগর্ভে কেটে গিয়েছে ৩৭ বছর। এবার অবাক লাগছে নিশ্চই! তবে আমাদের দেশেই মাত্র বছর ছয়েক আগে ঘটে গিয়েছে এমনই একটি ঘটনা। নাগপুরের বাসিন্দা কান্তাবাই ঠাকরে ১৯৭৮ সালে একবার গর্ভবতী হয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আর ইউএসজি এবং অন্যান্য পরীক্ষায় শিশুটির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। একটু অবাক লাগলেও চিকিৎসকরা ধরে নিয়েছিলেন কোনোভাবে গর্ভস্থ ভ্রূণের মৃত্যু হয়েছে। আর সেই মৃত ভ্রূণ রেচন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আসল ঘটনা জানা যায় ২০১৫ সালে। ৬০ বছরের কান্তাবাই-এর প্রসবযন্ত্রণা শুরু হল। তবে যে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হল, সে ইতিমধ্যে মৃত। আর তার শরীর ততদিনে শক্ত ক্যালসিয়ামের একটি পিণ্ডে পরিণত হয়েছে। চলতি ভাষায় এই ঘটনাকে বলা হয় ‘স্টোন বেবি’।

ভাবতে অবাক লাগে, ২০১৫ সালে এই ঘটনা সারা পৃথিবীতে চাঞ্চল্য ফেলে দিলেও ভারতেই এর আগে তিনটি এমন ঘটনা ঘটেছে। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের মোমিনপুরে আনতাম্মা নামের এক ৭০ বছরের মহিলা ‘স্টোন বেবি’ প্রসব করেছিলেন। এছাড়া ২০০৭ সালে ওড়িশার এবং ২০১৪ সালে তামিলনাড়ুর দুই মহিলাও একইধরণের মৃত সন্তান প্রসব করেন। আর সারা পৃথিবীতে এমন ঘটনার কথা জানা গিয়েছে ৩৫টির বেশি। ১৯০০ সালের আগেও ইউরোপে অন্তত ১৫টি এমন ঘটনার উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে। যদিও এধরণের জটিলতা চিকিৎসাশাস্ত্রে সত্যিই বিরল। ডাক্তারি পরিভাষায় এই ঘটনাকে বলা হয় ‘লিথোপেডিওন’। স্বাভাবিকভাবে জরায়ুর মধ্যে ভ্রূণের বিকাশ শুরু হলে এমন জটিলতা ঘটে না। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায় ভ্রূণের বিকাশ শুরু হয়েছে তলপেটে অথবা ডিম্বাশয়ের একদম কাছে। এরকম ঘটনাও যদিও খুব বিরল নয়। তারই এক ভগ্নাংশ ক্ষেত্রে লিথোপেডিওনের ঘটনা ঘটে।

চিকিৎসকদের মতে, জরায়ুর বাইরে ভ্রূণের বিকাশ শুরু হলে সেই ভ্রূণকে আর বাঁচানো যায় না। তখন সেই মৃত ভ্রূণের কোষগুলি মাতৃগর্ভেই বিনষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সামান্য কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভ্রূণটি মৃত্যুর আগেই যথেষ্ট পরিণত অবস্থায় পৌঁছে যায়। আর তখন সেই ভ্রূণের কোষগুলি সম্পূর্ন বিনষ্ট করা একরকম অসম্ভব হয়ে ওঠে। এর ফলে মায়ের শরীরেও নানাধরণের সমস্যা ঘটতে পারে। সেই সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনতে পথ খুঁজে নেয় শরীরই। সেই ভ্রূণের কোষগুলি তখন ক্যালসিয়ামে ভরে ওঠে। ক্রমশ শক্ত পাথরের মতো হয়ে যায় শরীরে। এর ফলে মায়ের শরীরে কোনো ধরণের সংক্রমণ ঘটে না ঠিকই; তবে বহু বছর পর প্রসবযন্ত্রণা উঠতে পারে। তখন মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে ১৯০০ সালের আগে। যদিও এই সমস্যা সম্পূর্ণ নির্মূল করার কোনো পদ্ধতি চিকিৎসকদের আজও জানা নেই।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পৃথিবীর বিরলতম ক্যানসারের চিকিৎসায় পথ দেখাচ্ছে আণুবীক্ষণিক কৃমি