শ্মশানেই ‘বৃন্দাবন’, প্রেমের নিভৃতিও; ভোলবদলের রূপকার অন্ধ্রের কোল্ড-ড্রিঙ্কস বিক্রেতা

শ্মশান, শব্দটা শুনলেই আজও এক আতঙ্কময় পরিবেশের কথাই মনে আসে। যেখানে বসে অনায়াসে ভেবে নেওয়া যেতে পারে একটা ভূতের গল্পের প্লট। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ সেখানে পা রাখে না বললেই চলে। শুধুই কুকুর, নেকড়ে অথবা শিয়ালের আনাগোনা। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশের রাজামহেন্দ্রভরম শ্মশানে এসে অবাক হতেই হয়। আদৌ কি শ্মশান? নাকি একটা পার্কেই এসে পড়েছেন? বুঝতে সময় লাগবে। এমনকি স্থানীয় মানুষরাও একে মাঝে মাঝে ‘বৃন্দাবন’ বলে উল্লেখ করেন। আর এই প্রায় অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তোলার পিছনে আছেন একটিমাত্র মানুষ। তাঁর নাম পাট্টাপাগালু ভেঙ্কট রাও। বছর ২৫ আগেই তাঁর মনে হয় দেশের শ্মশানগুলোকে সুন্দর করে তোলার কথা। আর সেই স্বপ্ন সফলও করে তুলেছেন।

সালটা ১৯৯৫। পাট্টাপাগালু তখন একজন কোল্ড-ড্রিংকস বিক্রেতা। আজও সেটাই তাঁর রোজগারের মূল উৎস। তবে তার সঙ্গে একটা আস্ত ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশনের মালিক তিনি। ১৯৯৭ সালে তৈরি করেন ‘কৈলাশভূমি’ নামের এই সংস্থা। কৈলাশ শিবের আলয়। আর শ্মশানেও তো শিবেরই বাস। ইতিমধ্যে দুটি শ্মশানকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে এই সংস্থা। হায়দ্রাবাদ, বেঙ্গালুরুতেও স্থানীয় সংস্থার সঙ্গে মিলিতভাবে আরও বেশ কিছু শ্মশানের সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছেন। এই কাজে লাভ হয় না কিছুই। প্রথম প্রথম তো নিজের খরচেই কাজ করতে হত। এখন অবশ্য অনেকেই সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন। তবে পাট্টাপাগালুর এই অভিনব নেশা সত্যিই অবাক করে।

স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা যেমন পেয়েছেন, তেমনই পেয়েছেন সম্মানও। ২০০৬ সালে পেয়েছেন প্রতিভা রাজীব পুরস্কার। তবে তার থেকেও বেশি পেয়েছেন তৃপ্তি। সময় পেলেই নিজেও চলে যান শ্মশানের চত্বরে। বসে থাকেন অনেক রাত পর্যন্ত। কখনও কাউকে সকাল বিকেল জগিং করতেও আসতে দেখেন। বা গাছের তলায় বসে প্রেম করে কোনো নতুন যুবক-যুবতী। না, গা ছমছম করে না। মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দিল্লিতে পথের কুকুরদের জন্য তৈরি হল বিশেষ শ্মশান, ভারতে প্রথম

More From Author See More