ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি? এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণ, ফিরল টাটাদের হাতেই

/১১

দীর্ঘ জটিলতা ও টালবাহানার পর অবশেষে নিলাম এয়ার ইন্ডিয়ার নিলাম সম্পন্ন হল। দেশের একমাত্র এয়ারলাইনসের মালিকানা এবার সরকারি হাত থেকে বেসরকারি হাতে চলে গেল। এয়ার ইন্ডিয়ার সমস্ত সত্ব কিনে নিল টাটা সন্স। বহু বিতর্কের মধ্যেই আবার উঠে আসছে এই সংস্থার ইতিহাস এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানা নস্টালজিয়ার প্রসঙ্গও।

/১১

স্বাধীনতার বহু আগেই ভারতের বিমান পরিষেবার যাত্রাপথ শুরু হয়। আর সেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন জেআরডি টাটা। তাঁর হাত ধরেই এয়ার ইন্ডিয়ার গোড়াপত্তন। অবশ্য শুরুতে নাম ছিল টাটা এয়ার সার্ভিসেস।

/১১

সেটা ১৯৩২ সাল। সেই বছরই প্রথম ভারতীয় হিসাবে বিমান চালানোর লাইসেন্স পেয়েছিলেন জেআরডি টাটা। আর একই বছরে তৈরি করে ফেলেছিলেন নিজের বিমান কোম্পানিও। ইংল্যান্ডের ইম্পেরিয়াল এয়ারওয়েজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভারতের নানা প্রান্তে চিঠিপত্র আদানপ্রদানের কাজ করতে থাকে টাটা এয়ার সার্ভিসেস।

/১১

১৯৩৮ সালের মধ্যেই অবশ্য ইম্পেরিয়াল এয়ারওয়েজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সম্পূর্ণ স্বাবলম্বী একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় টাটা এয়ার সার্ভিসেস। সেইসঙ্গে বদলে যায় সংস্থার নামও। টাটা এয়ারলাইনস নামে শুরু হয় যাত্রী পরিবহন। কলোম্বো থেকে দিল্লি পর্যন্ত দীর্ঘ আকাশপথে যাত্রার লাইসেন্সও পায় কোম্পানি।

/১১

এর মধ্যেই এসে পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন জেআরডি টাটা। কোম্পানির সমস্ত বিমান তখন যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা হতে থাকে। তবে এর মধ্যেই যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে নতুন করে ব্যবসার পরিকল্পনাও আঁটতে থাকেন জেআরডি।

/১১

১৯৪৬ সালে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসাবে স্বীকৃতি পায় টাটা এয়ারলাইনস। কিন্তু এর মধ্যেই এসে পড়ে স্বাধীনতার সন্ধিক্ষণ। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরেই শুরু হয় নানা পরিষেবামূলক উদ্যোগের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ। বিমান পরিষেবাও বাদ যায় না। প্রথমে কোম্পানির ৪৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় ভারত সরকার। এরপর ১৯৫৩ সালে বৈমানিক বাণিজ্যের পুরোটাই রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়।

/১১

টাটা এয়ারলাইনসের সঙ্গে আরও বেশ কিছু দেশীয় বিমান পরিবহন সংস্থাকে যুক্ত করে তৈরি হয় দুটি সংস্থা। এয়ার ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এবং ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস। আভ্যন্তরীন বিমান পরিবহনের কাজ করে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস। অন্যদিকে এয়ার ইন্ডিয়ার দায়িত্ব বৈদেশিক পরিবহনের। তবে মালিকানা হস্তান্তরিত হলেও ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান পদে বহাল ছিলেন জেআরডি।

/১১

১৯৬০ সালের মধ্যেই ঢেলে সাজানো হয় এয়ার ইন্ডিয়ার পরিষেবা। ততদিনে সংস্থার হাতে এসে গিয়েছে বোয়িং-৭০৭-এর মতো বিলাসবহুল এবং দ্রুতগতির বিমান। তবে এখানেই শেষ নয়। ১৯৬২ সালের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার সমস্ত পুরনো বিমান বিক্রি করে দিয়ে কেনা হয় জেট বিমান। এটিই পৃথিবীর প্রথম এয়ারলাইনস, যার সমস্ত বিমানই জেট বিমান।

/১১

আর এয়ার ইন্ডিয়ার ইতিহাসের কথা বললে তার বিজ্ঞাপনের কথা উঠবে না, এমনটা কী করে হয়? এয়ার ইন্ডিয়ার বিজ্ঞাপনের জন্যই সম্ভবত স্বাধীন ভারতের প্রথম ম্যাসকট তৈরি হয়েছিল। সেই মহারাজার ছবি আজও অনেকের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। ৯০-এর দশক পর্যন্ত বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হত মহারাজার ছবি। তবে শুধুই এয়ার ইন্ডিয়া নয়, কপিরাইট আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মশলা মুড়ি থেকে ফটাস জল – সবকিছুরই বিজ্ঞাপনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল মহারাজা।

১০/১১

তবে উদারনৈতিক অর্থনীতিতে বেশ খানিকটা লোকসানের মুখে পড়তে হয় এয়ার ইন্ডিয়াকে। ২০০০ সাল থেকেই তাই একাধিকবার বেসরকারিকরণের প্রস্তাব উঠেছে। ২০০৭ সালে এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসকে যুক্ত করে আনা হয় এয়ার ইন্ডিয়ার আওতায়। ২০১৮ থেকে আরও জোরালো হয়ে ওঠে বেসরকারিকরণের প্রস্তাব। তবে সেবছর কেউই কিনতে চাননি মালিকানা।

১১/১১

চলতি মাসেই প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা কিনে নিল টাটা সন্স। টাটার হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়া সংস্থা আবারও তাদেরই হাতে। তবে বেসরকারিকরণের ভালো এবং খারাপ দুটি দিক নিয়েই বিশেষভাবে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। শেষ পর্যন্ত কোনটা বড়ো হয়ে ওঠে, সেটাই দেখার।

Powered by Froala Editor