উল্টোদিকে চলে কাঁটা, বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসছে ঐতিহ্যবাহী ‘আদিবাসী ঘড়ি’

কথায় আছে, ‘সময় বহিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়’। সময় নিয়ন্ত্রণ করার সাধ্য নেই কারোর। কিন্তু হঠাৎ করে যদি ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে থাকে উল্টোদিকে (Anti-clockwise)? হ্যাঁ, অবাক লাগলে সত্যি। এবার এমনই এক আশ্চর্য ঘড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হল গুজরাটে (Gujarat)।

ভারত বৈচিত্র্যের দেশ। স্থান বিশেষে বদলে যায় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। সার্বিকভাবে গোটা দেশজুড়ে মূলত যে ঘড়ি ব্যবহৃত হয়, তার প্রচলন করেছিল ব্রিটিশরা। তবে পরবর্তীতে ঘড়ির তৈরির প্রযুক্তি ভারতে আসার পর, বিভিন্ন আদিবাসী উপজাতিই নিজেদের সংস্কৃতি মেনে শুরু করে ঘড়ি নির্মাণের প্রক্রিয়া। এই প্রসঙ্গে উঠে আসতে বাধ্য গুজরাটের কাভান্ত অঞ্চলের আদিবাসীদের কথা। 

সেখানকার মানুষদের মতে, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে বা অ্যান্টিক্লকওয়াইজ। আবার পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির অভিমুখও এই একইদিকে। অর্থাৎ, বাঁদিক থেকে ডানদিকে। দিন ও বছরের হিসেব যখন পৃথিবীর ঘূর্ণনের ওপরেই নির্ভর করে করা হয়, তবে সেই হিসেব মেনেই সময় ঘড়ির কাঁটারও ঘোরার কথা স্বাভাবিকের থেকে উল্টোদিকে। 

অবশ্য এই ঘড়ির ব্যবহার সীমিত কেবলমাত্র ছোটো উদেপুরের কাভান্ত গ্রামেই। তাছাড়া ছত্তিশগড়ের কোরবা জেলাতেও ব্যবহৃত হয় এই একইধরনের ঘড়ি। অবশ্য সেই ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সংখ্যাও লেখা হয় উল্টোদিকে। অর্থাৎ, দুপুর ১২টার পর সেই ঘড়িতে বাজে ১১টা। অন্যদিকে গুজরাটের ‘আদিবাসী ঘড়ি’-তে সময় নির্ণয় করা হয় স্বাভাবিকভাবেই। 

এবার এই ঐতিহ্যবাহী ঘড়িকে মূল স্রোতে নিয়ে আসতেই বিশেষ উদ্যোগ নিলেন গুজরাটের দুই আদিবাসী ব্যবসায়ী ও তাপির ডলভান তালুকের বাসিন্দা প্রদীপ প্যাটেল এবং ভারত প্যাটেল। ইতিমধ্যেই উৎপাদন শুরু হয়েছে হস্তনির্মিত এই হাতঘড়ির। আগামী ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি ছোটো উদেপুরে আদিবাসী একতা পরিষদের উদ্যোগ আয়োজিত হতে চলেছে তিন দিন ব্যাপী বিশেষ মেলার। সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে আসবে এই ‘আদিবাসী ঘড়ি’। এই ঘড়ি দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলেই আশাবাদী উদ্যোক্তারা। তাতে একদিকে যেমন স্বীকৃতি পাবে দেশের প্রান্তিক সংস্কৃতি, তেমনই ঘুরে দাঁড়াবার মঞ্চ পাবে আদিবাসী হস্তশিল্পও…

Powered by Froala Editor