প্রযুক্তির হাত ধরেই প্রাণ ফিরছে তামা-পিতল শিল্পে

তামা-পিতলের পাত পেটানোর ঠং ঠং শব্দ আর গরম পিতলের বিশেষ গন্ধ, সবই ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমনই মানুষের জীবন থেকে মুছে যাচ্ছে পিতল বা তামার বাসন আর আসবাবপত্রও। অবশ্য ইউনেস্কোর (Unesco) সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া একমাত্র ভারতীয় হস্তশিল্প পাঞ্জাবের পিতল শিল্প। আধুনিক বাজারে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই ঐতিহ্যও। এমন সময় ব্যবসার নতুন দিগন্ত খুলে দিল ইন্টারনেট মাধ্যম। ই-কমার্সকে সঙ্গী করেই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন জান্দিয়ালা গুরুর থাথেরা কলোনির শিল্পীরা। আর তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নতুন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘পি-তাল’ (PTal)।

‘পি-তাল’ অর্থাৎ পাঞ্জাবি থাথেরা আর্ট লেগাসি। তবে তার সংক্ষিপ্ত নামটিতেই চেনা যায় ভালোভাবে। যদিও পিতল শিল্প তো সারা ভারতেই একসময় ছিল। আজও কোনোরকমে টিকে রয়েছে। তবে পাঞ্জাবের তামা এবং পিতল শিল্পের এক নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। দেশের অন্যান্য প্রান্তের চেয়ে বরং কিছুটা দেরিতেই এখানে পিতল শিল্পের আগমণ ঘটেছিল। উনিশ শতকের প্রথমভাগে, পাঞ্জাবে তখনও মহারাজা রঞ্জিৎ সিং-এর শাসন। তিনিই কাশ্মীর থেকে শিল্পীদের নিয়ে এসে জান্দিয়ালা গুরু শহরে শুরু করেন পিতল এবং তামার কাজ। দেখতে দেখতে শিল্পীদের একটি গোটা বসতি গড়ে ওঠে সেখানে। এরপর ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হন রঞ্জিৎ সিং। পাঞ্জাবে শুরু হয় ইংরেজ শাসন। কিন্তু পিতল শিল্পীদের বসতি থেকেই যায়। আর তাঁদেরই স্থানীয় ভাষায় বলা হয় থাথেরা।

সময়ের নিয়মে অন্য অনেক হস্তশিল্পের মতোই হারিয়ে যাচ্ছিল থাথেরাদের জীবিকাও। এর মধ্যে করোনা অতিমারী যেন কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিয়েছিল। আর তখনই এগিয়ে এলেন আদিত্য আগরওয়াল, কৃতি গোয়েল এবং গৌরব গর্গ। তিনজনে তৈরি করলেন ‘পি-তাল’। থাথেরা বসতির শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুরু হয় কর্মকাণ্ড। শুধু শিল্পদ্রব্য রপ্তানিই নয়, সেইসঙ্গে তার আধুনিকীকরণ এবং স্থায়ীত্বের কথাও ভাবছেন উদ্যোক্তারা। আর তাই তামা এবং পিতল দিয়েই তৈরি করছেন নানা আধুনিক দ্রব্যও। এসবের পরিকল্পনার দিকটা মূলত সামলান কৃতি গোয়েল। আর বাকিরা সামলান ব্যবসার দিকটা। কৃতির নতুন ডিজাইনগুলির মধ্যে পিতলের দেয়ালঘড়ি, ওয়াইন গ্লাস, চায়ের কাপ রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

কীভাবে বাজারের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যায়, শিল্পীদের সেই শিক্ষাও দিচ্ছেন ‘পি-তাল’-এর উদ্যোক্তারা। বড়ো বড়ো সামগ্রীর পরিবর্তে জোর দিচ্ছেন শৌখিন অথচ ছোটো সামগ্রীর উপরে। আর এই উদ্যোগের ফলে যদি তরুণ প্রজন্ম বিকল্প জীবিকার অনুসন্ধান ছেড়ে নিজেদের সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে, তাহলেই উদ্যোগ সফল হবে। এমনটাই মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

আরও পড়ুন
প্রাচীন শিল্পকলাকে বাঁচানোর নয়া অস্ত্র ব্যাকটেরিয়া

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আঙুল হারানোর যন্ত্রণাকে ভাস্কর্যে ধরে রাখছেন মার্কিন শিল্পী