৩০ মিটার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা, জাপানে ভয়ঙ্কর সুনামির সতর্কতা জারি

জাপানের উত্তর উপকূলে হিকাইডো প্রদেশে এবং উত্তরপূর্বে ইওয়াতে প্রদেশে আছড়ে পড়তে পারে ভয়ঙ্কর সুনামি। সতর্ক করল জাপান সরকার। জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে এবং জাপান ট্রেঞ্চে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যদি এই ভূমিকম্পের মাত্রা ৯ এর কাছাকাছি হয় তবে ৩০ মিটারের ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে জাপানে।

এই আশঙ্কা নিয়েই, জাপানের একদল ভূতত্ত্ববিদ সতর্ক করেছেন সরকারকে। ইঙ্গিত দিয়েছেন চরম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে। জানিয়েছেন, বৃহৎ একটি ভূমিকম্পের কেন্দ্র হতে চলেছে জাপান ট্রেঞ্চ এবং কুরিল ট্রেঞ্চ। ফলে, উত্তর জাপানে সুনামির আঘাত আসন্ন।

জাপানের মন্ত্রিপরিষদ থেকে জানানো হয়, ভূমিকম্পের আগাম সম্ভাবনার গণনা করা কঠিন ব্যাপার। তবে এ-কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, উত্তর জাপানে প্রতি ৩০০-৪০০ বছর অন্তরই হানা দিয়েছে ভয়ঙ্কর সুনামি। শেষ ১৭ শতাব্দীতে দেখা গিয়েছিল এই সুনামি। তাই এই সতর্কতাকে যথেষ্টভাবে সমীহ করেই ব্যবস্থা নিচ্ছে জাপান সরকার।

জাপান ট্রেঞ্চ প্রসারিত হওয়ায়, হোকাইডো থেকে বোসো প্রদেশের দিকে জল সরে যেতে দেখা গেছে। টোকিও-র পূর্বে কুরিল ট্রেঞ্চও প্রসারিত হচ্ছে। রাশিয়ার পূর্বের এই কুরিল দ্বীপে সমুদ্রের জলের উচ্চতা কমেছে। যা সুনামির পূর্বাভাস বলেই মনে করছেন জাপানের ভূতত্ত্ববিদরা।

এর আগে ২০১১ সালে ভয়ঙ্কর সুনামির মুখোমুখি হয়েছিল জাপান। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৯। জাপান ট্রেঞ্চকেই কেন্দ্র করে হওয়া সেই সুনামিতে প্রাণ যায় ১৫ হাজার মানুষের। এইবার এই সুনামির কেন্দ্র হতে চলেছে সারিকু এবং হিদাকা।

টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং সিসমোলজিস্ট কেঞ্জি সাতাকে জানিয়েছেন, এই বিশাল মাত্রার সুনামি গত ৬০০০ বছরে বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্থ করেছে জাপানকে। এই মাত্রার ভূমিকম্প চিন্তার কারণ হতে পারে জাপানের কাছে। এখন এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দ্রুত পরিকাঠমো গঠন করা বেশ কঠিন কাজ। তাই উপকূলবর্তী অঞ্চলের বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয় এই মুহূর্তে।

জাপান মন্ত্রকের তরফে কাজ শুরু করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। মঙ্গলবার বিশেষ দল গঠন করা হয়। হিসাব করা হয় আগাম ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনার। ওই দলের গণনা অনুযায়ী অর্থনৈতিক ক্ষতি সামলে উঠতে ২০২১-এর মার্চ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে দেশের।

মিয়াকো প্রদেশে ২৯.৭ মিটারের সুনামি আছড়ে পড়ার পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে। হিকাডোয় জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা হতে পারে ২৭.৯ মিটার। উল্লেখ্য, ২০১১-র সুনামিতে ফুকুসিমা প্রদেশের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ছিল কল্পনাতীত। বিপর্যস্ত হয়েছিল পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র। সতর্ক করা হয়েছে ফুকুসিমাকেও। সেখানে ৫-১০ মিটারের ঢেউ দেখা যেতে পারে।

এই বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য জাপানের সর্বত্রই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এখন এই সম্ভাবনা কতটা সত্যি হতে চলেছে, দেখার বিষয় সেটাই। এই পূর্বাভাস ঘুম কেড়ে নিয়েছে জাপানের সকল মানুষের।