স্বাধীনতা ক্রমশ তলানিতে, আন্তর্জাতিক তালিকায় আরও নিচে নামল ভারতের সংবাদমাধ্যম

সংবাদমাধ্যমকে বলা হয় গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আর ভারতে তো বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। সেখানে সংবাদমাধ্যমের তো শক্তিশালী হওয়াই উচিত। কিন্তু বাস্তব কি তা বলছে? দুর্ভাগ্যবশত, আন্তর্জাতিক সমীক্ষা ভয়াবহ ছবিটাই তুলে ধরছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২০-এর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারত আরও নিচে নেমে গেছে আগের থেকে। বর্তমানে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে করা এই সমীক্ষায় ভারতের সংবাদমাধ্যমের স্থান ১৪২!

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ প্রতিবছর এমনই একটি সমীক্ষা করে। বিশ্বের সমস্ত জায়গায় সংবাদমাধ্যমের কাজ, তাঁদের সামাজিক প্রভাব, স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা— সমস্ত কিছু দেখে একটি তালিকা তৈরি করা হয়। আর সেখানেই ভারতের অবস্থান শোচনীয়। তবে শুধু এই বছরই নয়। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত নিচের দিকে নামছে আমাদের দেশ। গত বছরের তুলনায় আরও দুই ধাপ নিচে নেমেছি আমরা। কাজেই গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ যে বিপর্যস্ত, তা একপ্রকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়ে গেল। তালিকায় সবচেয়ে নিচে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। চিনের অবস্থাও খুব খারাপ, উত্তর কোরিয়ার তিন ধাপ মাত্র ওপরে। নরওয়ে এই বছরও শীর্ষস্থান দখল করেছে।

অবশ্য এই অভিযোগ অনেকদিন ধরেই তুলে আসছেন অনেকে। সংবাদমাধ্যম নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না; প্রশাসনের কথায় সায় দিয়ে যাচ্ছে। আর যারা কাজ করতে চাইছেন, যারা সত্যি ঘটনা সামনে নিয়ে আসতে চাইছেন, তাঁদের হয় গ্রেফতার করা হচ্ছে; নয়তো খুন করা হচ্ছে। আরএসএফ’র এই আন্তর্জাতিক রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ২০১৯-এ দীর্ঘ বহুদিন ধরে কাশ্মীর অবরুদ্ধ ছিল। সেইসময় ভেতরে কী চলছে কিচ্ছু জানা যাচ্ছিল না। সংবাদমাধ্যমকে একপ্রকার জোর করে দমিয়ে রাখা হয়। সম্প্রতি দুজনকে গ্রেফতারও করা হয় ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’র অপরাধে। কিছুতেই কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এর সঙ্গে ২০১৮-তে সাংবাদিক খুনের ঘটনাও রয়েছে। আমরা দেখেছি গৌরী লঙ্কেশ হত্যার ঘটনা। সব জায়গাতেই একটি বিশেষ মতবাদের আগ্রাসনকেই চিহ্নিত করা হয়েছে রিপোর্টে। সেটা আমরাও চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। ভারতের এই ‘গর্বিত গণতন্ত্রের’ স্তম্ভগুলো যে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে, এই ঘটনা সেসবেরই প্রমাণ দেয়।