পেশা চা বিক্রি, লকডাউনে দুঃস্থদের জন্য রাঁধতে আগ্রহী যাদবপুরের ‘শ্যামলদা’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকেই বাঁদিকে পার্কিং লন। সেই লম্বা জায়গাটিতেই এখন চলছে এক বিরাট কর্মসূচি। অনেকে নাম দিয়েছেন কমিউন, কেউ আবার বলছেন কমিউনিটি কিচেন। আসলে লকডাউনের জেরে বিপর্যস্ত দিন আনি দিন খাই মানুষদের ও তাঁদের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। তাঁদের সঙ্গে আছেন গবেষক, শিক্ষক ও কর্মচারী সকলেই। বিশবিদ্যালয় তো সমাজের বাইরের কোনো জায়গা নয়, প্রত্যেককে নিয়েই আসলে এক বিরাট পরিবার।

আরও পড়ুন
গার্হস্থ্য হিংসার শিকার পড়ুয়া, আশ্রয় দিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই

সেই পরিবারেরই একজন শ্যামল দাস। ৪ নম্বর গেটের বাইরে তাঁর চায়ের দোকান। সকলের পরিচিত 'শ্যামলদার দোকান'। চায়ের সঙ্গে তাঁর দোকানে পাওয়া যায় ওমলেট, নুডলস, টোস্ট। প্রতিদিন অসংখ্য পড়ুয়া ভিড় করে রাখতেন তাঁর দোকানে। এখন অবশ্য সেই দোকান বন্ধ। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের তিনি একজন। সেই ছোটবেলায় তাঁর বাবা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে মালির কাজ করতেন, নাড়ির টান সেই তখন থেকেই। তাই লকডাউনের মধ্যেও ক্যাম্পাসের মধ্যে আসতে ভোলেননি তিনি। তাঁর পাঁচ সদস্যের পরিবারের খাবারও যায় এই কমিউন থেকেই। এর মধ্যে একদিন এসে রান্নাও করে গিয়েছেন 'শ্যামলদা'।

আরও পড়ুন
যাদবপুরের দেওয়ালে দৃষ্টিহীনদের জন্য ব্রেইল গ্রাফিটি, রাজ্যে প্রথম, সম্ভবত ভারতেও

প্রতিদিন ৬০০ মানুষের রান্না হচ্ছে এই কমিউনে। রান্নার কাজ মূলত সামলাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি ভিত্তিক রাঁধুনি প্রদীপ নাথ। সেইসঙ্গে সাহায্য করছেন পড়ুয়ারাও। রোজ দুপুরে একটার মধ্যে ভাত, ডাল আর তরকারি রান্না শেষ হলে পড়ুয়ারা বেরিয়ে পড়ছেন সেই খাবার বিলি করতে। এর মধ্যে শ্যামলদা মাঝে মাঝে এলে ভালোই হবে, মনে করছেন প্রদীপবাবু। এই কথায় আগ্রহী শ্যামলবাবুও। তিনি বলছেন, সবাই চাইলে তিনি রোজই এসে রান্না করতে পারেন। রান্না করতে তাঁর ভালোই লাগে। আর এভাবেই মহামারীর দিনগুলিতে যে বিরাট সামাজিক ঐক্যের ছবি দেখাচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, তাকে একুশ শতকের রূপকথা বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না।