বিলুপ্তির পথে বিরল প্রজাতির ওরাংওটাং, দায়ী মানবসভ্যতাই

ষষ্ঠ 'মাস এক্সটিংশন' বা গণ-অবলুপ্তির পথেই হাঁটছে পৃথিবী। প্রতিনিয়ত পৃথিবী থেকে মুছে যাচ্ছে কোনো না কোনো প্রজাতির অস্তিত্ব। এবার সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা— মানুষ হারাতে চলেছে তার পূর্বসূরিকে। হ্যাঁ, লক্ষ লক্ষ বছর আগে ‘গ্রেট এপ’ থেকেই বিবর্তিত হয়েছিল মানুষ। সেই গ্রেট এপেরই একটি প্রজাতি ‘টাপানুলি ওরাংওটাং’ এসে দাঁড়িয়েছে বিলুপ্তির একেবারে দোরগোড়ায়। পৃথিবীর সর্বাধিক বিপন্নপ্রায় প্রজাতিগুলির মধ্যে এবার উঠে এল তাদের নাম।

ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রায় বাতাং তোরু পর্বতমালায় দেখা মেলে এই ওরাংওটাং প্রজাতির। বর্তমানে সেখানে টাপানুলি ওরাংওটাংয়ের সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮০০-তে। উনিশ শতকের শুরুতে যেখানে তাদের যা আবাসস্থল ছিল, তা বর্তমানে কমে এসে ঠেকেছে মাত্র ৩ শতাংশে। বিগত কয়েক বছর ধরে বৈজ্ঞানিক কনসাল্টেন্সি কোম্পানি 'বোর্নিও ফিচার'-এর তত্ত্বাবধানে চলেছিল একটি সমীক্ষা। এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়া-সহ অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। গত ৪ জানুয়ারি 'পিএলওএস ওয়ান' জার্নালে প্রকাশিত হয় এই গবেষণাপত্র। 

টাপানুলি ওরাংওটাং-এর বিচরণক্ষেত্র অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় অনেক বেশি বিস্তৃত। মূলত ইন্দোনেশিয়ার সমতলভূমি এবং নিম্নভূমি অঞ্চলের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ঘুরে বেড়াত তারা। অতিক্রম করত দীর্ঘপথ। তবে ক্রমাগত চোরাশিকারি এবং বন্যপ্রাণ মাফিয়াদের তাড়া খেয়ে বর্তমানে তারা অবস্থান নিয়েছে বাতাং তোরু পাহাড়ের জঙ্গলে। প্রথমত, এই পার্বত্য উচ্চভূমি একেবারেই উপযোগী নয় তাদের থাকার জন্য। পাশাপাশি মাত্র ১০০০ বর্গ কিলোমিটারের এই জঙ্গল খাদ্য সরবরাহের জন্যও যথেষ্ট নয় এই প্রজাতির কাছে। 

তবে সেই জঙ্গলও যে কতদিন টিকে থাকবে, সন্দেহ রয়েছে তা নিয়ে। বাতাং তোরুতে জলবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট তৈরির পরিকল্পনায় কয়েক বছর আগেই সবুজ সংকেত দিয়েছিল ইন্দোনেশিয়া সরকার। শুধুমাত্র লকডাউন এবং চিনের ব্যাঙ্কের থেকে ঋণগ্রহণের সমস্যার কারণেই থমকে আছে সেই কাজ। অন্যদিকে অরণ্যরক্ষার জন্য একজোট হয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন পরিবেশকর্মী ও সমাজকর্মীরা। কিন্তু কতদিন ঠেকিয়া রাখা যাবে এই ‘উন্নয়ন’-কে? অন্যান্য অরণ্যের মতোই বাতাং তোরুর ধ্বংসসাধন করতে বদ্ধপরিকর ইন্দোনেশিয়া সরকার।

আরও পড়ুন
শব্দ নয়, শিস দিয়েই ভাব বিনিময় করেন তাঁরা; অবলুপ্তির পথে তুরস্কের ‘পাখি ভাষা’

এসবের পাশাপাশি পাল্লা দিয়েই চলেছে চোরাশিকার এবং পাচারের ব্যবসা। হিসেব বলছে যদি প্রতিবছর মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ওরাংওটাং হারিয়ে যায় সুমাত্রা থেকে, তা হলেও মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাবে টাপানুলি ওরাংওটাংরা। তবে বাস্তবক্ষেত্রে সেই হার কয়েকগুণ বেশি।

আরও পড়ুন
নতুন সর্প-প্রজাতির সন্ধান দিলেন তরুণ গবেষক, শুরুতেই আশঙ্কা অবলুপ্তির

ইন্দোনেশিয়া প্রশাসন ও বনদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তাকে তীব্র সমালোচনা করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার। তবে তারপরেও কি হাল ফিরবে এই বিপন্নপ্রায় প্রজাতির? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সেখানেই…

আরও পড়ুন
জলবায়ুর পরিবর্তনই মেরু-গণ্ডারদের অবলুপ্তির কারণ, চাঞ্চল্যকর তথ্য গবেষণায়

Powered by Froala Editor