৫০ বছরের অপেক্ষার ইতি, প্রেমিকার সঙ্গে ঘর বাঁধতে চলেছেন ৮২ বছরের বৃদ্ধ

৭০-এর দশক। অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা। অস্ট্রেলিয়া থেকে পাঁচ দিনের সফরে রাজস্থানে এসেছিলেন এক তরুণী। নাম মারিনা। রাজস্থান সফরে তাঁর গাইড ছিলেন এক তরুণ রাজস্থানি যুবক। তাঁর সঙ্গেই ঘুরে বেরিয়েছিলেন মায়াময় ‘স্বর্ণ’ নগরী জয়সলমীর। পাঁচ দিনের ছোট্ট সফরেই মারিনাকে হাতে ধরে উট-চালনা শিখিয়েছিলেন সেই যুবক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেদিন হাজার হাজার প্রজাপতি উড়েছিল দু’জনের মনে। দু’জনেই ঠাহর করেছিলেন ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’ ছাড়া আর কিছুই নয় এ-জিনিস। দেশে ফেরার ঠিক আগে রাজস্থানি যুবকটির হাতে হাত রেখে মারিনা বলে গিয়েছিলেন অভিপ্রেত সেই তিনটি শব্দ। ভালোবাসার কথা। আজ সেই রাজস্থানী তরুণের বয়স ঠেকেছে ৮২-তে। আর এত-এত বছর পরে সত্যিই পূর্ণতা পেতে চলেছে তাঁদের রূপকথা।

এই প্রসঙ্গে আবার ফেরা যাবে। তার আগে জয়সলমিরের নিকটবর্তী জনপদ কুলধারার কথা বলে নেওয়া যাক। তবে জনপদ বললেও, কোনো মানুষেরই হদিশ মিলবে না এ শহরে। প্রায় দুশো বছর আগে আকস্মিকভাবেই এই জনপদ পরিত্যাগ করেছিলেন বাসিন্দারা। কুলধারা হয়ে উঠেছিল মৃত্যুপুরী। ঐতিহাসিক এবং গবেষকদের মতে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা অত্যাচারী শাসকের কারণেই শহর ছেড়েছিলেন তাঁরা। তবে লোককথা একেবারে অন্য গল্প বলে। অশরীরীর আনাগোনাই নাকি পরিত্যক্ত করে তুলেছিল এই শহরকে। আর তাই আজও এই জনপদের ধারে কাছে ঘেঁষে না সাধারণ মানুষ। পর্যটন শিল্প মাঝে শুরু হলেও ভূতের আতঙ্কেই তা বন্ধ হয়ে যায়।

এই কুলধারাতেই প্রায় পাঁচ দশক আগে বেড়াতে এসেছিলেন মারিনা। গ্রামের সকলে এই শহরের দূরে থাকলেও, প্রথম ভালোবাসার স্মৃতিবিজড়িত এই মৃত্যুপুরীতেই বিগত পঞ্চাশ বছর অপেক্ষা করেছেন রাজস্থানের সেই যুবক। কাজ নিয়েছিলেন কুলধারার একটি রাজপ্রাসাদের দারোয়ান হিসাবে।

তবে এই পঞ্চাশ বছরে দু’জনের মধ্যে একেবারেই যে যোগাযোগ হয়নি, এমন ভাবাটা ভুল। মারিনা সদ্য অস্ট্রেলিয়া ফেরার পর ৩০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজস্থানের সেই যুবক। কাটিয়ে এসেছিলেন তিন মাস। ভেবেছিলেন বিবাহ করে মারিনাকে নিয়ে আসবেন ভারতে। তবে মারিনা জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে ভারতে থাকা সম্ভব নয়। এদিকে পরিবারের হাল ধরতে তাঁকে ফিরতেই হবে ভারতে। 

আরও পড়ুন
শুধুই প্রেম নয়, হানিমুনের সঙ্গে জড়িয়ে অপহরণ ও ‘লুকিয়ে রাখা’র ইতিহাসও!

বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরেছিলেন তিনি। বিবাহ করতে না চাইলেও জোর করেই তাঁর বিয়ে দেয় পরিবার। আর মারিনা? তিনি নিঃসঙ্গই কাটিয়েছেন এতগুলো বছর। মাঝে মধ্যেই সমুদ্র পেরিয়ে ভারতে এসে পৌঁছত তাঁর চিঠি। তবে কোনো প্রত্যুত্তর পাননি তিনি।

আরও পড়ুন
নিজাম পরিবারের কন্যার প্রেমে ইংরেজ সাহেব, বদলে নিলেন নাম–পোশাকও

সম্প্রতি ‘হিউম্যানস অফ বোম্বে’ পোর্টালে এই প্রেমকাহিনির স্মৃতিচারণা করেছেন রাজস্থানের ৮২ বছর বয়সের ‘তরুণ’। না, সেই প্রেমিকের নাম প্রকাশিত হয়নি কোথাও। তবে নাম নয়, প্রেমই মুখ্য এই কাহিনিতে। কারণ সম্প্রতি তিনি ফের চিঠি পেয়েছেন মারিনার থেকে। ভারতে আসতে চান মারিনা। অন্যদিকে তিনি নিজেও এখন বেশ খানিকটা স্বাধীন। বছর দুয়েক আগে মারা গেছেন তাঁর স্ত্রী। সন্তানরাও থাকেন রাজস্থানের বাইরে। তাদের আপত্তিও নেই বাবার নতুন সংসারের ব্যাপারে। কাজেই একসঙ্গে নতুন করে ঘর বাঁধার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রস্তাব মেনেই ফের ভারতে আসতে চলেছেন মারিনা। মহামারীর কারণে খানিকটা পিছিয়ে গেছে সেই সফরের সূচি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই পরিণতি পাবে দীর্ঘ প্রত্যাশা। এখন সেই অপেক্ষাতেই প্রহর গুনছেন কুলধারার দারোয়ান… 

আরও পড়ুন
প্রেম-পীরিতি ছেড়ে, বাঙালি ‘ভালোবাসতে’ শিখল কবে থেকে?

Powered by Froala Editor