জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ নিয়ে উত্তপ্ত আফ্রিকা, বিপদ ডেকে আনবে নদীবাঁধ?

দীর্ঘ এক দশক ধরেই চলছে মতবিরোধ। নীল নদের ওপরে গ্র্যান্ড রেনেসাঁ বাঁধ নির্মাণ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে ঘিরে সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় বসতে সম্মত হল ইথিওপিয়া, মিশর এবং সুদান। ছ’ সপ্তাহ আগে শেষ পর্বের বৈঠকে বয়কটের ডাক দিয়েছিল সুদান। তবে মূলত বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু ইথিওপিয়া এবং মিশর হলেও, সুদান নিজেই উপস্থিত হয়েছে এই বিতর্কে।

আফ্রিকার দীর্ঘতম নদী, নীল প্রবাহিত হয় উগান্ডা, সুদান, দক্ষিণ সুদান এবং মিশরের ওপর দিয়ে। অন্যদিকে নীলের শাখানদী, উপনদী বিধৌত অঞ্চলের মধ্যে পড়ে ইথিওপিয়া। নীলের শাখা নদী ‘ব্লু নীল’-এর ওপর এই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করে ইথিওপিয়া। আর তারপরেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে আফ্রিকার তিন দেশ। প্রথম দাবি তুলেছিল মিশরই। জানিয়েছিল মিশরের পানীয় এবং সেচ প্রকল্পের জন্য ব্যবহৃত জলের ৯৭ শতাংশই আসে নীল থেকে। নীলের শাখানদীর ওপর বাঁধ তৈরি করলে জলপ্রবাহে সমস্যা দেখা দেবে। প্রভাবিত হবে গোটা দেশ। 

পরে এই দ্বন্দ্বে সামিল হয় সুদানও। প্রতিবেশী দেশে বাঁধ নির্মিত হলে অনেকটা ক্ষমতাই চলে যাবে তাদের হাতে। সেই আশঙ্কা থেকেই বিরোধিতার পথ বেছে নেয় সুদান। দাবি জানায়, জলস্তর কমে যাবে তাদেরও। দীর্ঘদিনের এই বিরোধ বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অন্যতম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলিতেও। আর এই চলতে থাকা বিবাদের কারণে থমকে রয়েছে ইথিওপিয়ার এই বিদ্যুৎ প্রকল্প।

তবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হলে তা হবে আফ্রিকার সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। তৈরি হবে প্রায় ৬০০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ। তাতে যেমন ইথিওপিয়ার ক্রমবর্ধমান শিল্প এবং সাধারণ মানুষের চাহিদা মেটা সম্ভব হবে, তেমনই বাড়তি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেতে পারবে কেনিয়া, সুদান, ইরিত্রিয়া ইত্যাদি পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে। যা পারতপক্ষে ইথিওপিয়ার অর্থনীতিকেই চাঙ্গা করে তুলবে।

গত বৈঠকেও ইথিওপিয়ার গবেষক এবং আধিকারিকরা বেশ জোর গলাতেই বলেছিলেন, এই বাঁধ নির্মিত হলে নদীর গতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। পাশাপাশি বন্যার সম্ভাবনাও হ্রাস পাবে অনেকটাই। বন্যার দাবি মেনে নেওয়ার পরেও বৈঠক বয়কট করে সুদান। কারণ গোটা প্রকল্পের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতার ইস্যু। 

আগামী বৈঠকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ছাড়াও আফ্রিকান ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্যরাও যোগ দিচ্ছেন সমস্যা সমাধানে। তবে এর আগেও আফ্রিকান কাউন্সিল বৈঠকে অংশ নিলেও দ্বন্দ্ব মেটানোর ক্ষেত্রে সেইভাবে ভূমিকা রাখেনি কোনো। আগামী দেখার দশকজুড়ে চলতে থাকা এই বিরোধের নিষ্পত্তি হয় কিনা আগামী বৈঠকে...

আরও পড়ুন
‘২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্ম নয়’, ক্রিসমাসের বিরোধিতা করেছিলেন ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানরাই!

Powered by Froala Editor

More From Author See More