কথা বলে ছত্রাকরাও! চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার ব্রিটিশ গবেষকদের

আজ থেকে প্রায় ৫০ হাজার বছর আগের কথা। মানব সভ্যতায় জন্ম নিয়েছিল ভাষা। তবে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে শুধু কি মানুষই কথা বলে? না, অন্যান্য প্রাণীরাও নিজেদের মধ্যে মনের ভাব আদান-প্রদান করে স্বতন্ত্র ভঙ্গিতে। সেই ভাষা অবশ্য মানুষের মতো উন্নত নয়। আর উদ্ভিদ? এতদিন পর্যন্ত ধরে নেওয়া হত, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে অক্ষম তারা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় ভাঙল সেই ভুল। অন্তত ফাঙ্গাস বা ছত্রাক গোত্রের উদ্ভিদের স্বতন্ত্র ভাষা রয়েছে, এমনটাই জানালেন গবেষকরা।

হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কথা বলতে পারে ছত্রাক। ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্ট অফ ইংল্যান্ডের একদল বিজ্ঞানীর গবেষণায় প্রকাশ্যে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিটিশ গবেষক অ্যান্ড্রু অ্যাডামৎস্কি। সম্প্রতি রয়্যাল সোসাইটি অফ ওপেন সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি। এবার তা ১০০ শতাংশ সঠিক বলেই অভিমত বিজ্ঞানীদের। কিন্তু প্রাণীদের মতো অঙ্গভঙ্গি করে ভাব প্রকাশ করার সুযোগ নেই উদ্ভিদের। তবে কীভাবে কথা বলে ছত্রাক? 

শুরু থেকেই বলা যাক এই গবেষণার কথা। মূলত, ছত্রাক বা প্রচলিত মাশরুমের চারটি প্রজাতি নিয়েই শুরু হয়েছিল এই গবেষণা। প্রাণীদের মতো ছত্রাক সংবেদনশীল কিনা, তা পরীক্ষা করাই ছিল এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। এই পরীক্ষার সময়ই গবেষকদের নজরে আসে, এক বিশেষ ধরনের ইলেকট্রিকাল ইমপালস তৈরি করে ছত্রাক। যা হুবহু মিলে যায় মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর নিউরোনের সংবেদনশীলতার সঙ্গে। মানুষ কথা বলার সময়, এই একই ধরনের ইমপালস প্রবাহিত হয় স্নায়ুকোষের মধ্যে দিয়ে। তবে মস্তিষ্কে এই তরঙ্গের প্রক্রিয়াকরণ হয়ে, তার বহিঃপ্রকাশ হয় কথার মাধ্যমে। 

আশ্চর্যের বিষয় হল, মানুষের দেহে একেক রকম অনুভূতির জন্য যেমন ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিকাল ইমপালস তৈরি হয়, ঠিক তেমন ঘটনাই দেখা যায় ছত্রাকের ক্ষেত্রে। গবেষকদের অভিমত, এটি তাদের স্বতন্ত্র ভাষা। প্রতিটি ইমপালস আদতে আলাদা আলাদা শব্দ। এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে এই ধরনের ৫০টিরও বেশি শব্দের অস্তিত্ব চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তাদের অর্থ কী? কী কাজেই বা ব্যবহৃত হয় এই ভাষা? 

গবেষকদের অনুমান, খাদ্যদ্রব্যের খোঁজ থেকে শুরু করে শিকার ও শিকারির অস্তিত্ব, বিপর্যয়ের আশঙ্কা এমনকি নিজেদের বেদনার কথাও প্রকাশ করে ছত্রাক। তবে বলাই বাহুল্য, এখনও পর্যন্ত এই ভাষাকে ডিকোড করতে সক্ষম হননি বিজ্ঞানীরা। বাস্তবে যদি প্রোফেসর শঙ্কুর ‘লিঙ্গুয়াগ্রাফ’ যন্ত্রের অস্তিত্ব থাকত, তবে অনায়াসেই পড়ে ফেলা যেত তাদের এই রহস্যময় কথোপকথনের কথা…

Powered by Froala Editor