সামান্যতম বায়ু দূষকের উপস্থিতিও ক্ষতি করে স্বাস্থ্যের, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক সমীক্ষা

১৯৫২ সালের কথা। শীতের লন্ডন ঢেকে গিয়েছিল ঘন কুয়াশার চাদরে। না, কুয়াশা বলা ভুল হবে, ধোঁয়াশা। কুখ্যাত সেই লন্ডন স্মোগের পরই বায়ু দূষণ নিয়ে চর্চা শুরু হয় গোটা বিশ্বজুড়ে। কিংবদন্তি ব্রিটিশ বিজ্ঞানী তথা গায়া তত্ত্বের জনক জেমস লাভলকের সৌজন্যে এর কয়েক বছরের মধ্যেই আবিষ্কৃত হয়েছিল বায়ু দূষণ পরিমাপের যন্ত্র। বায়ুতে দূষকের পরিমাণ ঠিক কতটা হলে তা ক্ষতিকর হয়ে ওঠে, সেই মাত্রাও বেঁধে দিয়েছেন গবেষকরা। তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে ভিন্ন কথা। বায়ুতে সামান্যতম দূষকের (Minimum Pollutant) উপস্থিতিও প্রাণ নিতে পারে অনায়াসেই। 

হ্যাঁ, এমনটাই জানাল সাম্প্রতিক গবেষণা। দূষণের মাত্রা বিপদ-সীমা অতিক্রম না করলেও দূষকের সামান্য উপস্থিতিই ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে স্বাস্থ্যের। এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও ঘটতে পারে দূষকের সামান্য উপস্থিতিতে। 

১৯৮১ থেকে ২০১৬— দীর্ঘ ৩৫ বছরের সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই হয়েছে এই গবেষণা। আর এই তথ্যভাণ্ডার প্রদান করেছে খোদ কানাডা (Canada) সরকার। একই সঙ্গে প্রায় ৭০ লক্ষ কানাডিয়ানের স্বাস্থ্যের নথিও পর্যালোচনা করেছিলেন গবেষকরা। সেখান থেকেই উঠে আসে, তুলনামূলক বায়ুদূষণের বিপদ-সীমার মধ্যে অর্থাৎ নিরাপদ মাত্রার মধ্যে থাকার পরেও প্রতি বছর দূষণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০০০ কানাডিয়ান। মৃত্যু হয়েছে সহস্রাধিক মানুষের। এমনকি কলকারখানা-জনিত বায়ুদূষণ নেই যে সব অঞ্চলে, সেখানেও দেখা গেছে শ্বাসজনিত রোগের প্রকোপ। যার জন্য দায়ী মূলত দূষক। 

এখানেই শেষ নয়। ইউএস হেলথ এফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ব্রিটিশ কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে এই একই সমীক্ষা চালানো হয় ৬ কোটি মার্কিন বাসিন্দা ও ইউরোপের ২.৭ কোটি মানুষের ওপর। সেখানেও উঠে আসে একই ফলাফল। 

এই দুই গবেষণার ফলাফল থেকেই গবেষকদের অভিমত, আদতে ‘নিরাপদ’ দূষণ সীমা বলে কিছু হয় না। বা আরও ভালো করে বলতে গেলে, বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে ‘আঞ্চলিক দূষণ’ শব্দবন্ধটি কোনোভাবেই প্রযোজ্য নয়। বায়ু প্রবাহী হওয়ার ফলে, দ্রুত ব্যাপনের মাধ্যমে দূষক ছড়িয়ে পড়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে। ফলে, যে-সব অঞ্চলে প্রত্যক্ষ দূষণ নেই, সেখানেও থাবা বসায় দূষক। অন্যদিকে কম মাত্রায় দূষকের উপস্থিতিও একই প্রভাব ফেলে মানুষের স্বাস্থ্যে। তবে দূষকের ঘনত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে আক্রান্তের সংখ্যাও। সাম্প্রতিক এই গবেষণা বায়ুদূষণের প্রতি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গিকেই বদলে দিচ্ছে সার্বিকভাবে। দূষণ সর্বত্র নিয়ন্ত্রণে না এলে, আদৌ যে লাভের লাভ হবে না কিছু— সে-ব্যাপারেই সতর্ক করছেন গবেষকরা…

Powered by Froala Editor

More From Author See More