চুরি হয়ে যাওয়া সামগ্রী থেকেই তৈরি হচ্ছে আফগানিস্তানের নতুন ইতিহাস

জাদুঘরে যত্ন নিয়ে সাজানো ঐতিহাসিক সামগ্রী। কিন্তু তার প্রকৃত ইতিহাসই যে জানা নেই! তবুও দর্শকরা সেইসব জিনিস দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। সম্প্রতি বেশ কিছু আফগানি প্রত্ন উপাদান নিয়ে উঠেছে এমনই বিতর্ক। তবে বিতর্কই শেষ নয়। বরং পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এইসব উপাদান নিয়ে শুরু হয়েছে গবেষণা। আর সেখানে থেকেই মধ্যযুগের প্রাচ্যের ইতিহাস নতুন উপাদান নিয়ে হাজির হচ্ছে।

এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছেন মূলত নোরা ভন অ্যাকেনবাখ। হাম্বুর্গ শহরের এই গবেষক ২০১৮ সালে প্যারিসের একটি নিলামের তালিকা দেখে অবাক হয়ে যান। আরও নানা দামি দামি জিনিস থাকলেও তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি মার্বেল পাথরের ফলক। কিন্তু তালিকায় এই নমুনাটি নিয়ে প্রায় কিছুই লেখা ছিল না। শুধু বলা হয়েছিল, এক ফরাসি দম্পতির ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে পাওয়া।

নিলামে ফলকটি কেনার পর থেকেই অ্যাকেনবাখের মনের মধ্যে প্রশ্ন জেগেই থাকে। শেষ পর্যন্ত ইতালির এক সহ-গবেষকের কাছ থেকে জানতে পারেন অনুরূপ কিছু ফলকের কথা। এও জানা যায় যে, প্রাক্তন গজনি ভূখণ্ড থেকে এক ইতালীয় দল ফলকগুলি সংগ্রহ করে আনে। দলটি গজনি পৌঁছায় ১৯৫৬ সাল নাগাদ। তবে এই সংগ্রহের কাজ পুরোটাই আফগান সরকারের দৃষ্টি লুকিয়ে হয়েছে বলেই জানতে পারেন তিনি। আর বে-আইনি এইসব সামগ্রী সহজেই পৌঁছে গিয়েছে কোনো ধনী পরিবারের হাতে।

অ্যাকেনবাখ এইসব উপাদানকে ‘অপহৃত সামগ্রী’ বলেই উল্লেখ করেছেন। আর পৃথিবীর নানা জাদুঘরে ছড়িয়ে থাকা এইসব সামগ্রীর একটি তালিকাও তৈরি করে ফেলেছেন। দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ উপাদানই সংগ্রহ করা হয়েছে গজনি ভূখণ্ড থেকে। একসময় আরব থেকে ভারতবর্ষ পর্যন্ত ক্ষমতা বিস্তার করে ফেলেছিল যে সাম্রাজ্য, তার ইতিহাস সংরক্ষণ করার ব্যাপারে সচেতন নন কেউই। আর কিছুদিন আগে পর্যন্ত গ্রামবাসীদের দৃষ্টি এড়িয়ে ইতিহাস চুরি একেবারেই কঠিন কাজ ছিল না। এখন অবশ্য পরিস্থিতি একটু একটু বদলাচ্ছে। কিন্তু ইতিমধ্যে হারিয়ে যাওয়া উপাদানগুলি না পাওয়া গেলে অবশ্য অনেকটাই অজানা থেকে যাবে।

Powered by Froala Editor