স্বপ্ন আর বাস্তবকে দেখতে নতুন দৃষ্টি নিয়ে হাজির নতুন শর্ট ফিল্ম ‘চোখ’

চোখ, আমাদের পাঁচটা ইন্দ্রিয়ের একটি। বস্তুবাদীরা হয়তো বলবেন চোখ দিয়ে আমরা দেখি। কিন্তু চোখ বন্ধ করেও কি দেখি না কিছুই? হ্যাঁ, স্বপ্ন দেখি। কিন্তু সেটা তো বাস্তব নয়। কল্পনা। আচ্ছা, কোথায় গিয়ে সীমানা টানব বাস্তব আর কল্পনার? স্বপ্ন তো একটি মানুষের নিজস্ব। কিন্তু বাস্তবও কি তাই নয়? ভিড়ের মধ্যে থেকেও যখন মানুষ ক্রমশ একা হয়ে পড়ছে তখন আর বাস্তব জগতেই বা সকলের মিলিত অংশগ্রহণ কোথায়?


সমাজে প্রতিদিন বেড়ে চলা অবসাদ, আত্মহত্যা আর নেশার বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে ঠিক এই প্রশ্নগুলোকেই আমাদের সামনে তুলে ধরতে চাইছে প্রতীক দে চৌধুরীর শর্ট ফিল্ম ‘চোখ’। একটিমাত্র চরিত্রকে নিয়েই তৈরি সিনেমাটি। মাত্র সাড়ে ছয় মিনিটের বাহুল্যবর্জিত সিনেমায় পরিচালক প্রতীক দে চৌধুরী তুলে ধরেছেন স্বপ্ন আর বাস্তবের দ্বন্দ্বকে। আর সেই টানাপোড়েনকে আরও গভীরে অনুভব করেছি আবহসঙ্গীতের ভিতর দিয়ে। সুপ্রিয় মিত্রের সুরের দক্ষতা স্বীকার করতেই হয়।

আরও পড়ুন
ঘরে বসেই তৈরি শর্ট ফিল্ম, সম্পর্কের নতুন দিক চেনাতে আসছে 'ইউ মি এন্ড আমরা’

সিনেমার দৃশ্যায়নে এই একাকিত্বকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নীল আলো, ঘুমের ওষুধ আর একটা ছুরির রূপকে। তবে এই রুপকের ভিতর দিয়ে হয়তো বাস্তব দ্বন্দ্বকে অনেকটা কাব্যিক করে তোলা হয়েছে। তাতে মনে হতে পারে একটা প্রোপাগান্ডা তৈরির জন্যই সাজানো হয়েছে কাহিনি। তবে কাহিনি লিখতে গিয়ে অলোকপর্ণা এবং সুমন সাধু ছুঁতে চেয়েছেন একটা অনুভূতিকে। একাকিত্বের মধ্যে সঙ্গীর স্পর্শ না পেয়ে যখন প্রোটাগনিস্ট সমুদ্রের দিকে হেঁটে যায়, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এক অসীমের দিকে যাত্রাকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ক্যামেরার সাহায্যে। হয়তো সেখানেই আছে আলোর সন্ধান। কিন্তু আত্মহত্যাও তো একটি খুন। আর খুন মানেই গুহার মতো অন্ধকার। এই বার্তাও দিয়ে যায় সিনেমাটি।

আরও পড়ুন
প্রকাশ্যে এল '৯০ সালে ইরফান খান অভিনীত শর্ট ফিল্ম, জড়িয়ে এফটিটিআই-এর বাঙালিরাও

আরও পড়ুন
জাতপাতের হিংসার মধ্যেই মানুষের বেঁচে থাকা, নতুন শর্ট ফিল্মে উঠে এল 'বদ্ জাত'দের কথা

প্রোটাগোনিস্টের চরিত্রে সুমন সাধুর অভিনয়ের প্রশংসা করতেই হয়। অভিনয় বলতে অবশ্য এক্ষেত্রেও সেই চোখ। মাঝে মাঝে স্বপ্নের মধ্যে ডুবে যাওয়া আর তারপর ঘুম ভেঙে বাস্তবের মাটিতে ফিরে আসা, এই নিয়েই এগিয়েছে কয়েকটি দৃশ্য। ট্রেলারেই দেখা গিয়েছিল সমুদ্রের ধারে একা একাই কাবাডি খেলছে ছেলেটি। আসলে যেন কাউকে ছুঁতে চাইছে সে। কিন্তু সে তো কেবল স্বপ্ন মাত্র। এরপর তো ভিড়ের মধ্যেও একা সে। সেই একাকিত্ব থেকে মুক্তির জন্য নিজেকেই নিজের সঙ্গী করে নিতে চায় সে।

সম্প্রতি ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ‘ফার্স্ট-টাইম ফিল্মমেকার সেশনস’এ ডিজিটাল প্রিমিয়ারে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। বাস্তবিক অর্থেই আন্তর্জাতিক আবেদনকে মাথায় রেখে বানানো এই সিনেমা। ভাষা তাই কোনো বাধা নয় এখানে। বা বলা ভালো, সিনেমার তো নিজস্ব ভাষা থাকে। সেই ভাষাতেই সম্পূর্ণ কাহিনি বলে গিয়েছেন চিত্রনাট্যকার। নাকি কাহিনি নয়? কেবল কিছু দৃশ্য? আজকের বহু কাহিনির মধ্যেই কি একটু খুঁজলে পাওয়া যাবে না সেই দ্বন্দ্বের দৃশ্যগুলিই?

Powered by Froala Editor