বিপন্ন মেষপালকদের জীবিকা, অভিযোগ বনদপ্তরের বিরুদ্ধে

কয়েকদিনের হাড় কাঁপানো ঠান্ডার পর শীত আবার বিদায় নেওয়ার মুখে। পশমের চাদর, কম্বল, সোয়েটার সবই এবার তুলে রাখতে হবে। আবার পরের বছর প্রয়োজন হবে। কিন্তু শীতের সঙ্গী এই পশমের নির্মাতারা কেমন আছেন, সে খবর কজনই বা রাখেন? এমনকি সরকারও উদাসীন তাঁদের বিষয়ে। আর তাই অবহেলায় হারাতে বসেছে উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) শতাব্দীপ্রাচীন মেষপালকদের (Shepherd) জীবিকা। সময়ের সঙ্গে লড়াই করতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন অন্য কোনো জীবিকা। কেউ আবার পাহাড় ছেড়ে নেমে আসছেন সমতলে।

ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৭০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত বাগোরি এমনই এক গ্রাম। বংশপরম্পরায় এখানকার মানুষের জীবিকা মেষপালন। সারাবছর ভেড়া আর ছাগল পালন করার পর শীতের শুরুতে তাদের নিয়ে নেমে আসেন সমতলের কাছে। সেখানে চারণভূমিতে ভেড়া ও ছাগল চড়িয়ে আবার বসন্তে ফিরে যান গ্রামে। এই সময়টাই তাদের লোম তৈরির জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সময়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে চারণভূমি খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ছে বাগোরি গ্রামের মানুষদের পক্ষে। চেনাজানা চারণভূমিগুলি সবই বনদপ্তর কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দিয়েছে। সেখানে ভেড়া বা ছাগল নিয়ে যেতে গেলে বনদপ্তরকে অর্থ দিতে হবে। আর সেই মূল্যও ক্রমশ বাড়ছে। এমনকি টাকা দিয়েও অনুমতি পাওয়া সহজ নয়। কারণ বহু চারণভূমিতে বড়ো গাছ লাগিয়েছেন বনবিভাগের কর্তারা।

চারণভূমির অভাবে ভেড়া বা ছাগলদের পুষ্টি অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। ফলে পশমের গুণমানও কমছে। বাজারেও তাই কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে মেষপালকদের। কারণ অন্যদিকে এসে গিয়েছে কৃত্রিম পশমে তৈরি জিনিসপত্র। তবে গ্রামবাসীদের অভিযোগের তীর বনদপ্তরের দিকেই। চারণভূমি পেলে এখনও কারখানায় তৈরি পশমের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় রাজি তাঁরা। তাছাড়া মেষচারণের সুফলও নেহাৎ কম নয়। শীতের সময়ের শুকনো ঘাস খেয়ে নেয় ভেড়া এবং ছাগলরা। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনাও কমে যায়। তাছাড়া ভেড়া এবং ছাগলের বর্জ্য পদার্থ পেয়ে মাটির উর্বরতাও বাড়ে। গ্রীষ্মে নতুন করে ঘাস জন্মাতে পারে সেখানে। কয়েকশো বছর ধরে এভাবেই টিকে রয়েছে সেখানকার পরিবেশ। বনদপ্তর সেই স্বাভাবিক গতিটাই বন্ধ করে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের।

স্বাধীনতার পরেও চারণভূমির জন্য কোনো মূল্য দিতে হত না মেষপালকদের। ২০১১ সাল থেকে শুরু হয় এই ব্যবস্থা। তখন এক একটি ভেড়ার জন্য দিনে ১ টাকা এবং এক একটি ছাগলের জন্য দিনে ২ টাকা মূল্য স্থির করা হয়। গত ১০ বছরে সেই মূল্য বেড়েছে ৮ গুণ। এক একজন মেষপালকের যেখানে কয়েকশো ভেড়া ও ছাগল থাকে, সেখানে এই মূল্য দেওয়া তাঁদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠছে। অবশ্য বনবিভাগের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে বারবার। তাঁদের বক্তব্য, বনভূমিকে বাঁচাতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বনভূমির সীমানা বাড়াতে গিয়ে চারণভূমি নষ্ট করলেও যে পরিবেশ বাঁচানো সম্ভব নয়। জীবজগতের একটা বড়ো অংশই যে বেঁচে থাকে এই চারণভূমির উপর। মেষপালকরা হয়তো অন্য জীবিকা খুঁজে নেবেন। কিন্তু ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে। হারাবে বাস্তুতন্ত্রও।

Powered by Froala Editor