ষোড়শী গ্রেটার সঙ্গেই পরিবেশ বাঁচাতে লড়ছে এগারো বছরের ঋধিমা

গ্রেটা থুনবার্গ। পরিবেশ আন্দোলন সম্পর্কে একটু সচেতন হলে আপনি এতদিনে জেনে গেছেন ষোলো বছরের এই কিশোরীর নাম। পরিবেশ রক্ষার্থে এই মেয়ের আন্দোলন গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে ইতিমধ্যেই।

তিনি পরিবেশ রক্ষার জন্য লড়াই করছেন ইউ এন ক্লাইমেট সামিটে। তবে তিনি এখন আর একা নন। তাঁর সঙ্গে যোগ দিল উত্তরাখন্ডের ঋধিমা পাণ্ডে। রিধিমা নয় বছর বয়স থেকেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে লড়ছে। ইউ এন ক্লাইমেট সামিটে ষোলোর গ্রেটার গর্জন, 'হাউ ডেয়ার ইউ' এখন ভাইরাল সারা বিশ্বে। ক্ষোভ উগরে দিয়েছে গ্রেটা বিশ্বের তাবড় নেতাদের পরিবেশ রক্ষার উদাসীনতার বিরুদ্ধে। গ্রেটা প্রত্যেক শুক্রবার স্কুলে না গিয়ে সুইডিশ পার্লামেন্টের বাইরে বসে করেছে নীরব প্রতিবাদ। একে একে সবাই তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে।

গ্রেটার সঙ্গে এই লড়াইয়ে শামিল হয়েছে আরও পনেরোটি কিশোর-কিশোরী। বিভিন্ন দেশের এই পনেরোজনের মধ্যেই একজন এগারো বছরের ঋধিমা। ইউনাইটেড নেশনস-এর কাছে তারা নিজেদের নালিশ ফাইল করেছে পাঁচটি দেশের সরকারের বিরুদ্ধে, যারা পরিবেশ রক্ষার জন্য আদৌ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ফ্রান্স, জার্মানি এবং তুরস্ক – এই পাঁচটি দেশ সবথেকে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে। বারোটি দেশের ষোলোজন পিটিশনার বিভিন্ন ভাষাভাষীর সমমত পোষণ করেন। তাদের সাহায্য করছে আন্তর্জাতিক ল ফার্ম হসফিল্ড, যারা পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্ত আইনি প্রক্রিয়ার কাজকর্ম করে।

‘চিলড্রেন ভার্সেস ক্লাইমেট ক্রাইসিস’ ওয়েবসাইটে ঋধিমার বায়োতে লেখা, সে একটি সুন্দর ভবিষ্যত পেতে ইচ্ছুক।

নয় বছর বয়সে বাকি বাচ্চারা যখন কার্টুন দেখতে ব্যস্ত, ঋধিমা তখন ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে পিটিশন জমা দেয় আইনি অভিভাবকের সাহায্যে। বাহান্ন পাতার সেই পিটিশনে লেখা ছিল যে, ভারত সরকারের এই আবহাওয়া পরিবর্তন আটকানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একটি কার্বন বাজেট ঠিক করা দরকার যা ঠিক কতটা কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করা হবে তার সীমা নির্ধারণ করবে। আবহাওয়া ঠিক করার সমস্ত ব্যবস্থা সরকারের সত্বর গ্রহণ করা উচিত।

ঋধিমা ২০১৭ সালে ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউ কে’-তে জানায়, তার দেশ গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে ব্যর্থ বলে আবহাওয়ার এই দুর্গতি। এই দেশের জ্বালানি কম ব্যবহার করে বিকল্প শক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা থাকলেও তা প্রয়োগ না করায় সে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জানিয়েছে।

ঋধিমা পরিবেশের প্রতি এই ভালবাসা তার বাবা দীনেশ পাণ্ডের থেকে পেয়েছে। তিনি ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডের হড়কা বান হবার সময় থেকেই লড়ছেন। ঋধিমাকে তার কাজে সাহায্য করেছেন আইন বিশেষজ্ঞ রাহুল চৌধুরী, ঋত্বিক দত্ত এবং মীরা গোপাল। যদিও গ্রিন ট্রাইব্যুনাল থেকে জানানো হয় যে পিটিশনে উল্লিখিত সমস্যা আগেও ফাইল করা হয়েছিল তাই পুনর্বার এই অভিযোগ নেওয়া হবে না। কিন্তু পিছু হটেনি ঋধিমা। সারা বিশ্বের নজর গ্রেটার ওপরে থাকলেও ঋধিমা নিঃশব্দে এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।