সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতা রুখতে একজোট সমস্ত ধর্মের প্রতিনিধিরা, বলছেন শান্তির কথা

মাত্র কয়েকদিন আগেই ঘটে গেছে দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা। এই কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, ইদানিং কালে দেশ জুড়ে বেশ কয়েকবার তৈরি হয়েছে এরকম পরিস্থিতি। যেখানে সিংহভাগ জুড়ে আছে শুধুই ধর্ম। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে নাগরিক সমাজের প্রকৃত কর্তব্য থেকে আমরা কেউই সরে আসতে পারি না। সেটা হল, একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা। রুখে দাঁড়ানো। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কলকাতার প্রেস ক্লাবে বুধবার অনুষ্ঠিত হল ‘শোলডার টু শোলডার’ শীর্ষক একটি বিশেষ সাংবাদিক সম্মেলন। আয়োজনায় ছিল ‘ইন্ডিয়ান প্লুরালিজম ফাউন্ডেশন’।

আরও পড়ুন
প্রান্তকথা ও এটিএইচবি-র যৌথ উদ্যোগে শহরে পথ চলা শুরু প্রথম ট্রান্সজেন্ডার ক্লিনিক ‘অন্তর’-এর

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা; এছাড়াও ছিলেন অন্যান্য বিদ্বজনেরাও। গোটা সম্মেলনে মূল বক্তব্য হিসেবে উঠে এল ভারতের সম্প্রীতি, ঐক্যের আদর্শ। সেই প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ধর্মের সহাবস্থান দেখেছে এই দেশ। কিন্তু হঠাৎ এমন হিংসা, এমন আগুনে পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে সেই কথা ভুলে যাচ্ছে সমাজের একটা বড় অংশ। বিভাজনের খেলা যে আমাদের ঐতিহ্য নয়, বরং বারবার সেই ভেদাভেদকে হারিয়েই উঠে এসেছে ভারতবাসী, সেটাই স্পষ্ট করে দিলেন ধর্মীয় প্রতিনিধিরা। উপস্থিত ছিলেন নাখোদা মসজিদের ইমাম মৌলানা শফিক কোয়াসমি, কলকাতার জিউইস কমিউনিটির জেনারেল সেক্রেটারি মিসেস এ এম কোহেন, সন্ত কুতিয়া গুরুদ্বারের পক্ষ থেকে তারসেম সিং প্রমুখ।

আরও পড়ুন
কফিশপের মধ্যেই অভিনয়, কলকাতায় থিয়েটারের নতুন সংজ্ঞা বুনছে এই নাট্যগোষ্ঠী

নাখোদা মসজিদের মৌলানা শফিকের কথাতে উঠে এল ভারতের সেই চিরন্তন গরিমার কথা। “ভারতবর্ষ আমাদের সবার দেশ। আমরা সবাই ভারতবাসী। সমস্ত ধর্মকে নিয়ে চলা এই দেশের ঐতিহ্য। কলকাতা তো বটেই, অন্যান্য জায়গায় গেলেও দেখতে পাবেন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পরপর সমস্ত ধর্মের পীঠস্থানগুলি অবস্থিত। যেমন আছে মন্দির, তেমনই কাছাকাছি রয়েছে কোনো মসজিদ, গির্জা, আবার গুরুদ্বার। এটাই তো ভারতের সংস্কৃতি! আজ সেই সংস্কৃতিকে যারাই ধ্বংস করছে, ধর্মে ধর্মে দাঙ্গা লাগাচ্ছে, তাদেরকে একঘরে করে রাখা উচিত।”

আরও পড়ুন
শিল্পই হোক শিল্পীর একমাত্র পরিচয়, ‘স্বশিক্ষিত’ ছবিওয়ালাদের প্রদর্শনীর সাক্ষী কলকাতা

এই প্রসঙ্গেই উঠে এল ধর্মগ্রন্থগুলির কথাও। পৃথিবীর কোনো ধর্মগ্রন্থে হিংসার কথা লেখা নেই। বরং সমস্ত ধর্ম মন দিয়ে পড়লেই প্রকৃত অর্থে মুক্তমনা হওয়া যায়। মৌলানা শফিক থেকে শুরু করে উপস্থিত সবার গলাতেই এই একই সুর। যেমন, প্রাক্তন আইনজীবী অভীক সাহা বললেন, “আমাদের সংবিধানে শান্তিই আইন। অশান্তি বেআইনি।

আরও পড়ুন
কলকাতায় করোনা-আতঙ্ক, চিনা নববর্ষ উদযাপনে ভাটা শহরে

ভারতের আইনব্যবস্থা তিনটে জিনিসকে গুরুত্ব দিয়েছে। এই দেশে প্রত্যেকটি মানুষ সমান; প্রত্যেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ধর্ম অবলম্বন করতে পারবে; আর প্রতিটা মানুষের একটিই ভোট দেওয়ার অধিকার আছে। কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে দুটি বা তিনটি ভোটদানের সুযোগ দেওয়া হয়নি। আজ যেটা হচ্ছে, সেটা বেআইনি। সেটা অন্যায়, অপরাধ। ভারতে বিনা লাইসেন্সে কেউ আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে পারে না। তাহলে কী করে খোলা রাস্তায় বন্দুক নিয়ে নেমেছিল, সেটার অনুসন্ধান করা হোক।”

আরও পড়ুন
সাতরঙা কার্পেট নিয়ে, কলকাতায় হাজির আফগানি সমকামী লেখক

অনুষ্ঠানে শেষলগ্নে ইন্ডিয়ান প্লুরালিজম ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ওয়াইস আসলাম একটা ছোট্ট চরকার মডেল দেখালেন। যেটা অনুষ্ঠানের পুরো সময়ই রাখা হয়েছিল। কারণ বলতে গিয়ে ওয়াইস জানান, “এটা গান্ধীর দেশ। এই চরকা গান্ধীর সেই শান্তির প্রতীক। আমরা চাই, গান্ধীর আদর্শ বেঁচে থাকুক। গান্ধী মারা গেলেও, তাঁর আদর্শ যাতে না মরে।” আজকের এই অন্ধকার পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই কথাটাই যেন অনুষ্ঠানটির সঠিক প্রতিধ্বনি দিল। এখান থেকে উঠে এল একটাই আহ্বান, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার। হাতে হাত রেখে ভালোবাসায় জয় করা সময়কে; ঘৃণা, রক্ত, হিংসায় নয়…