মৃতদেহ পরিণত হবে জৈবসারে, যুক্তরাষ্ট্রেই রয়েছে এমন প্রক্রিয়াকরণকেন্দ্র

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার (Funeral) মূলত দুটি রীতি প্রচলিত গোটা বিশ্বজুড়ে— দেহ সমাধিস্থ করা এবং দেহদাহ। কিন্তু দুটি পদ্ধতিই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে পরিবেশকে। দীর্ঘদিন ধরেই তাই শেষকৃত্যের বিকল্প পদ্ধতির অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন মার্কিন গবেষকরা। উঠে এসেছিল একাধিক পন্থার কথা। শেষ পর্যন্ত গত বছরের মে মাসে আইনের বদল এনেছিল যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। অনুমতি দিয়েছিল মৃতদেহ থেকে মানব মৃতদেহ থেকে জৈব সার (Organic Fertilizer) তৈরির পদ্ধতিকে। এবার আমেরিকায় বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়ে গেল এই পদ্ধতি।

মৃতদেহ প্রক্রিয়াকরণের এই বিশেষ পদ্ধতিটির বৈজ্ঞানিক নাম কম্পোস্টিং বা মালচিং। মূলত, খড়, শুকনো পাতার সঙ্গে নানান ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং মসের উপস্থিতিতে মৃতদেহকে জৈব সারে রূপান্তরিত করাই ‘কম্পোস্টিং’। মৃতদেহকে জৈব সারে রূপান্তরিত করার এই পদ্ধতি উদ্ভাবনের নেপথ্যে রয়েছে মার্কিন সংস্থা ‘রিকম্পোজ’। দীর্ঘদিন ধরেই কার্বনমুক্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য লড়াই করে চলেছে সংস্থাটি। ২০২০ সালে আমেরিকায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নতুন আইন পাশ হওয়ার পরেই ফিউনেরাল হাউস নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছিল ‘রিকম্পোজ’। চলতি বছরের শুরু থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করেছিল সেই মৃতদেহ প্রক্রিয়াকরণকেন্দ্র। এবার বাণিজ্যিকভাবে শুরু হল এই সংস্থার কর্মসূচি। 

সংস্থার বিবৃতি অনুযায়ী, এই পদ্ধতিতে মাত্র ৩০ দিনের মধ্যেই মৃতদেহ পরিণত হবে জৈব সারে। পাশাপাশি জৈব অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য খরচও তুলনামূলকভাবে অনেকটা কম। মৃতদেহ বিয়োজনের পর উৎপাদিত জৈব সার কীভাবে ব্যবহৃত হবে, তা ঠিক করার স্বাধীনতাও থাকছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিবারের কাছে। 

সাধারণভাবে একটি মৃতদেহ দাহ করার ফলে উৎপাদিত হয় প্রায় এক মেট্রিকটন কার্বন-ডাই-অক্সাইড। যা কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি-চালিত যানের দু’মাসের উৎপাদিত কার্বন নির্গমনের সমান। পাশাপাশি অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসও মেশে পরিবেশে। কফিনের মধ্যে সমাধিস্থ করা হলে, ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ— সেগুলিও মৃত্তিকা দূষণ ঘটায় কোনো না কোনোভাবে। কফিন তৈরির কাঠের জন্যও গাছ কাটা হয় দেদার। সব মিলিয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ভয়ানকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরিবেশ। সেখানে দাঁড়িয়ে কম্পোস্টিং পদ্ধতি কার্বন নির্গমন কমানো তো বটেই, কার্বন সিঙ্কের মতো আচরণ করবে। 

যেকোনো মৃত্যুই আমাদের কাছে স্পর্শকাতর। প্রিয়জনকে চিরকালের মতো বিদায় জানানো কি সহজ কাজ? তবে ক্রমশ মৃত্যুর ব্যাপারে ধারণা বদলাচ্ছে মানুষের। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই মৃত্যুর আগে তাঁদের মৃতদেহ দান করছেন বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য। কেউ আবার পূর্বপরিকল্পনা করে যাচ্ছেন কীভাবে সমাধিস্থ হবে তাঁর মৃতদেহ। সার্বিকভাবে এই দৃষ্টিভঙ্গির বদলতে মার্কিন সমাজবিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন ‘ডেথ পজিটিভ’ আন্দোলন হিসাবে। এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে বিশেষভাবে কার্যকর হয়ে উঠবে কম্পোস্টিং পদ্ধতি, সে ব্যাপারেই আশাবাদী মার্কিন গবেষকরা…

Powered by Froala Editor

More From Author See More