বৃক্ষরোপণের পর প্রাণে বাঁচে না ৫০ শতাংশ গাছ! চাঞ্চল্যকর তথ্য সমীক্ষায়

একমাত্র বৃক্ষরোপণই বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যার সমাধান দিতে পারে, সে-ব্যাপারে সহমত বিশ্বের প্রায় সমস্ত গবেষকই। বিগত কয়েক দশকে বৃক্ষরোপণ নিয়ে যথেষ্ট সচেতনতাও গড়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সরকারি প্রকল্প ছাড়াও, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, স্কুল পড়ুয়ারাও হাত লাগিয়েছে বৃক্ষরোপণে (Reforestation)। কিন্তু কতটা সফল হচ্ছে এইসকল প্রকল্প? এবার এ-বিষয়েই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল সাম্প্রতিক গবেষণায়।

একটি নয়, ‘জার্নাল অফ অ্যাপ্লায়েড ইকোলজি’, ‘ফরেস্ট ইকোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ এবং ‘ফিলোজফিক্যাল ট্রান্সাকশন অফ রয়্যাল সোসাইটি’— এই তিনটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত ভিন্ন ভিন্ন তিনটি সমীক্ষার দাবি, অরণ্য পুনরুদ্ধার প্রকল্পে রোপণ করা গাছের ৫০ শতাংশই প্রাণ হারায় মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই। অর্থাৎ, বিশ্বজুড়ে পুরোদমে অরণ্যায়ন প্রকল্প চললেও, তাতে আখেরে লাভ হচ্ছে খুব কমই। অবশ্য দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওপরেই চালানো হয়েছিল এই সমীক্ষা। আর এই সমীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করেই গোটা বিশ্বের মডেল তৈরি করেছিলেন ‘ফোর-রিস্টোর’ নেটওয়ার্কের গবেষকরা। 

কিন্তু বৃক্ষরোপণের পর এই বিপুল পরিমাণ গাছ মারা যাচ্ছে কেন? এই প্রসঙ্গে প্রথমেই যে বিষয়টি উল্লেখ করছেন গবেষকরা, তা হল মাটির প্রকারভেদ। উপযুক্ত জমিতে গাছ রোপণ না করার জন্য গড়ে ২০ শতাংশ চারা মারা যায়। গবেষকরা জানাচ্ছেন, যে-সমস্ত গাছ জলাভূমির আশেপাশে জন্মায়, সেসব গাছের চারা ল্যাটেরাইট বা খনিজ সমৃদ্ধ মাটিতে রোপণ করলে ২৮ শতাংশ গাছের মৃত্যু হয়। আবার এর উল্টোটাও ঘটে জলাভূমির ক্ষেত্রে। 

এই তালিকায় গবেষকরা জায়গা দিয়েছেন পরিচর্যার অভাবকেও। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৃক্ষরোপণ প্রকল্প সম্পূর্ণ হলেই, সংশ্লিষ্ট চারাটির দিকে নজর রাখেন না পরিবেশকর্মীরা। তারজালি কিংবা বেড়া দিয়ে এসব গাছ ঘিরে না দেওয়ার কারণে, তৃণভোজী প্রাণীদের শিকার হয় বহু চারা। 

তবে সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হল, খোলা জমিতে গাছের চারা রোপণ করলে, সেই গাছের বাঁচার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। অন্যদিকে অরণ্যের মধ্যে বৃক্ষরোপণ করলে, প্রায় নিশ্চিতভাবেই বেঁচে যায় গাছ। অর্থাৎ, বলতে গেলে কোনো মহীরুহ বা অন্যান্য গাছের ‘সংস্পর্শে’ থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না চারা। কিছুদিন আগেই ভিন্ন একটি গবেষণায় উঠে এসেছিল গাছেরাও কথা বলে নিজেদের মধ্যে। খাদ্যসামগ্রী আদানপ্রদান করে শিকড়ের সাহায্যে। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে আসে এই আশ্চর্য তথ্যের সঙ্গে যেন মিলে যাচ্ছে পূর্ববর্তী গবেষণার ফলাফল। 

সবমিলিয়ে বৃক্ষরোপণের প্রথম ৫ বছরের মধ্যে প্রাণ হারায় ৪৪ শতাংশ বৃক্ষ। পরবর্তী ৫ বছরে গাছের সংখ্যা কমে যায় আরও ৬ শতাংশ। অবশ্য এই ঘটনার জন্য মানুষের পরিকল্পনাহীন কর্মসূচিকেই দায়ী করছেন গবেষকরা। অরণ্য পুনরুদ্ধার প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের প্রশাসনকে নির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রকাশ করারও আবেদন জানিয়েছেন গবেষকরা। না হলে হাজার বৃক্ষরোপণের পরও হাল ফিরবে না প্রকৃতির…

Powered by Froala Editor