ছেড়ে গেছে মা, নিকারাগুয়ায় মানুষের কোলেপিঠেই বাড়ছে খুদে রয়্যাল বেঙ্গল

ভূমিষ্ঠ হল সন্তান। কিন্তু তার গায়ের রং একেবারে আলাদা বাবা-মায়ের থেকে। তাই সদ্যজাত-র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল মা। সম্প্রতি এমন দৃশ্য দেখা গেল নিকারাগুয়া চিড়িয়াখানায়। সাদা হওয়ার কারণে ছোট্ট ব্যাঘ্র শাবককে পরিত্যক্ত করল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বাঘের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা বিরলতম বলাই চলে। তবে মা পরিত্যক্ত করলেও ‘সৎ মা’-এর কাছে দিব্যি রয়েছে নবজাতক।

নিকারাগুয়া চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর এডুরাডো সাকাসা’র স্ত্রী মারিয়ানাই দায়িত্ব নিয়েছেন এই ব্যাঘ্র শাবকের। এমনিতেও চিড়িয়াখানার ৭০০ বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তাঁর। তাদের পরিচর্যা ছাড়াও একটি বন্যপ্রাণ উদ্ধারকেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করেন মারিয়ানা। ঘড়ি ধরে প্রতি তিন ঘণ্টা ছাড়া ছাড়াই ছোট্ট শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছেন তিনি। দুধ ঠাণ্ডা হয়ে গেলে কেঁদে, চিৎকার করে সৎ মায়ের কাছে অভিযোগও জানাচ্ছে ছোট্ট শাবক। সেও আপন করে নিয়েছে মারিয়ানাকে। খাওয়া, ঘুম, স্নান করা— সবটাই হচ্ছে তাঁর কোলেই।

মারিয়ানা আদর করে শাবকটির নাম রেখেছেন ‘নাইভ’। স্প্যানিশ ভাষায় যার অর্থ ‘তুষার’। শ্বেতশুভ্র গায়ের রঙের কারণেই এমন নামকরণ করেছেন মারিয়ানা। তিনি জানান, নাইভের মা-কে বছর কয়েক আগে ফেলে গিয়েছিল এক সার্কাস দল। তার গায়ের রং হলুদ হলেও বাবার গায়ের রং সাদা হওয়ার কারণে প্রচ্ছন্নভাবেই জিনে সংরক্ষিত হয়েছিল এই অ্যানোমালি। যা প্রকট হিসাবে ধরা দেয় নাইভের ক্ষেত্রে।

বর্তমানে বন্য প্রাণী হিসাবে সম্পূর্ণ অবলুপ্ত সাদা বাঘ। চামড়ার লোভেই এককালে প্রচুর শিকার করা হয়েছে এই বিরল প্রাণীকে। ১৯৫৮ সালে শেষ বন্য সাদা বাঘকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে জানান দেয় আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণের নথি। বর্তমানে পৃথিবীতে যত সাদা বাঘ দেখতে পাওয়া যায় তারা সকলেই বন্দি অবস্থায় লালিত-পালিত বিভিন্ন চিড়িয়াখানায়। তবে নাইভের জন্মে বিশ্বব্যাপী সাদা বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল বেশ কয়েক বছর পর। এই খুশির পাশাপাশি কিছুদিনের মধ্যেই নিকারাগুয়া চিড়িয়াখানার মূল আকর্ষণ হয়ে উঠবে নাইভ, সে ব্যাপারেও আশাবাদী সৎ মা মারিয়ানা...

Powered by Froala Editor