সহ্যাদ্রী পর্বতমালার বন্য পথে একা ১২ দিনে ৬০০ কিলোমিটার পাড়ি— বিরল নজির বঙ্গসন্তানের

১২ দিনে ৬০০ কিলোমিটার পথ। তাও আবার সহ্যাদ্রী পর্বতমালার বন্য পথ ধরে। পথই বা বলা যায় কী করে? সহ্যাদ্রী পর্বতমালার এই দুর্গম বন্য পথে আসলে রাস্তা বলতে কিছুই নেই। ম্যাপ দেখে নিজের মতো একটা পথ বানিয়ে নিয়েছিলেন অভিষেক তুঙ্গ। সেই পথ ধরেই দৌড়। দিনে তীব্র গরম, রাতে তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে অনেকটাই। অভিষেকের দৌড় থামেনি। পিঠে ৫ কেজি ওজনের স্যাক। তাতে শুকনো খাবার, ওষুধ, জল, ল্যাপটপ। পথের বেশিরভাগটাই জনমানবহীন। ফলে জল ও খাবার খেতে হয়েছে মেপে। বিপদের সম্ভাবনা ছিল একশো শতাংশ। কিন্তু তারপরেও গুজরাটের নবপুর থেকে দৌড় শুরু করে মহারাষ্ট্রের লোনাভালায় পৌঁছেছেন অভিষেক। সমস্তটা শুনে মনে হতেই পারে রূপকথার গল্প। অথচ, এমন অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটিয়েও অভিষেক চুপচাপ। তার কাছে এটা ট্রান্স হিমালয় দৌড়ে পার হতে পারার প্রস্তুতি মাত্র। সেই পরীক্ষা যে আরও কঠিন হবে।

দৌড়ের পরিভাষায় একে বলে ট্রেল রান। বাংলার ট্রেল রান এবং অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের জগতে অভিষেক এখন এক নতুন তারকা। যাদবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা মেদিনীপুরের অভিষেকের গল্পটা আর পাঁচজনের মতোই সাদামাটা ছিল। তারপর ঝোঁক চাপল ম্যারাথন দৌড়ের। সঙ্গে পাহাড় প্রেম। ক্লাইম্বিং শেখার পর শুরু হল ট্রেল রান। এর আগে মাত্র ১২ ঘণ্টায় একদৌড়ে মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু উঠে নজির গড়েছেন অভিষেক। ইয়াকসাম থেকে জোংরি টপে উঠেছেন মাত্র ৬ ঘণ্টায়। চেষ্টা করেছেন একদিনেই ইয়াকসাম থেকে জোংরিলা, গোচালা ছুঁয়ে ফের ইয়াকসামে নেমে আসতে। নিজের সামনে কঠিন থেকে কঠিনতর টার্গেট ছুঁড়ে দিতেই ভালো লাগে তাঁর। আর ভালো লাগে বিপজ্জনক পাহাড়ি পথের নেশা।

সহ্যাদ্রীর বুকে এই দৌড়ের সময় একবার নাকি পথও হারিয়ে ফেলেছিলেন। অভিষেক জানালেন, “দশম দিনে বনে রাস্তা হারিয়ে ফেললাম। টানা ২ ঘণ্টা ধরে পথ খুঁজছি। কখনও রক ক্লাইম্বিং করে উঠছি, নামছি, পথ খুঁজে পাচ্ছি না। এদিকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, রাস্তা হারিয়েই ফেললাম। একবার ভাবলাম, রক ক্লাইম্বিং করে পাহাড় পেরিয়ে চলে যাব। তারপরেই মনে হল, সেটা মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত হবে। এদিকে কাঁটাগাছে পা ছড়ে গেছে। খানিক অসহায়ও লাগছে। নিজেকে শান্ত করতে বসলাম এক জায়গায়। ল্যাপটপ খুলে ফের ম্যাপ দেখলাম খুঁটিয়ে। মাথা ঠান্ডা করে পথ খুঁজতে শুরু করলাম ফের। পেয়েও গেলাম।” পথ খুঁজে না পেলে কী হত, ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়। কিন্তু অভিষেক এগুলো স্বাভাবিকভাবেই নেন। এসবই তো পরীক্ষা। পথ হারানো, বেঁচে থাকার লড়াই। পাহাড় তাঁর সমর্পণ আর দক্ষতার পরীক্ষা নেয় বারবার। আর অভিষেক নিজেও পরীক্ষা নেন নিজের। এরপরে লক্ষ্য হিমালয়। অ্যাডভেঞ্চার ভুলতে বসা বাঙালিদের অবিশ্বাস্য এক স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এই বঙ্গসন্তান।

More From Author See More