অভাব ঠেকাতে করেছেন রান্নার চাকরিও, জাতীয় স্তরে সোনা নদীয়ার মেয়ের

সংসারের ভার নিজের কাঁধে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে নিয়েছেন দেশের ভারও। আজ একের পর এক সাফল্যের মুখ দেখে চলেছেন তিনি। সম্প্রতি ন্যাশনাল ওয়েটলিফটিং প্রতিযোগিতায় ৬৪ কেজি বিভাগে সোনা জিতলেন বাংলার রাখি হালদার। বাংলা তো বটেই, গোটা দেশ আজ তাকিয়ে রয়েছে নদীয়ার দক্ষিণ বিষ্ণুপুর গ্রামের এই মেয়েটির দিকে।

বাবা ছিলেন পেশায় মৎস্যজীবী। মা সুচিত্রা হালদার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। দারিদ্র্য ছিল চিরকালই। এমন সময় ঘটে গেল বিপর্যয়। পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন বাবা নলিন হালদার। মাথায় গুরুতর চোট লাগে। ৪০টি সেলাই পড়ে। প্রায় ২ বছর সংজ্ঞাহীন হয়ে ছিলেন। রাখি তখন বেশ ছোটো। অভাবের সংসার আরও বড়ো গর্তে এসে পড়ল।

খেলাধুলার প্রতি উৎসাহ ছিল বরাবরের। চেহারাও শক্তপোক্ত। শেষে ভারোত্তোলনে যোগ দেন রাখি। এদিকে সংসারে যে অভাব! কিন্তু মেয়ের খেলায় কোনোরকম বাধা দেননি সুচিত্রাদেবী। তিনি নিজেও তো একসময় রাজ্য স্তরের হয়ে খেলেছেন। খো খো থেকে শুরু করে ১০০ মিটার, ২০০ মিটার দৌড়, শটপুট— তিনিও চেয়েছিলেন খেলার জগতে থাকতে। কিন্তু দারিদ্র্য তাঁর স্বপ্নের ইতি ঘটিয়েছে। মেয়েরও সেটা হোক, একেবারেই চান না। আজও সেই কথাই ভেবে যান তিনি।

লড়াই কম করেননি রাখিও। ভালোভাবে প্র্যাকটিসের জন্য বিজয়ওয়াড়ায় চলে গিয়েছিলেন। খরচের জন্য একটি স্কুলে রান্নার চাকরিও করেছিলেন তিনি। তার ওপর শুনতে হয়েছে অনেকের কথা। মেয়ে হয়ে কিনা খেলাধুলা করবে! কিন্তু খেলা থেকে এক মুহূর্তের জন্যও সরেননি। নিজেকে প্রস্তুত করেছেন বড় মঞ্চের জন্য। দেশের হয়ে নামবেন, পদক জিতবেন, এটাই লক্ষ্য তাঁর।

তার ফলও পেয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালে কমনওয়েলথ গেমসে ২১৪ কেজি ওয়েট তুলে সোনা জেতেন তিনি। তখন থেকেই আলাদা করে নজরে আসেন তিনি। এশিয়াডেও সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি। আস্তে আস্তে ভারোত্তোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। এখন নিজের ব্যক্তিগত সেরা স্কোর করে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপও জিতলেন। এবার লক্ষ্য টোকিও।

আজ এই খেলার সুবাদেই ভারতীয় রেলে চাকরি পেয়েছেন রাখি হালদার। বাড়ির অবস্থাও কিছুটা সামলানো গেছে। বাবা এখনও অসুস্থ। তার মধ্যেই নতুন স্বপ্ন দেখছেন রাখি। ইতিমধ্যেই মীরাবাঈ চানু টোকিও অলিম্পিকের জন্য যোগ্যতামান পেরিয়েছেন। বাকি আছে আর একটি জায়গা। গোটা দেশের অন্যতম আশা আজ রাখি। অলিম্পিকের কোয়ালিফায়ারস লিস্টে তিনি ১৯ নম্বরে আছেন। আশা করছেন, টোকিওতে যেতে পারবেনই। সেই অনুযায়ী, প্রস্তুতিও চলছে। স্বপ্ন দেখুক রাখি হালদার, স্বপ্ন দেখুক গোটা দেশ। রাখিকে অনেক শুভেচ্ছা আমাদের তরফ থেকে।