বর্জ্য ফেলার জায়গা হয়ে উঠল অরণ্য, কলকাতার বুকে আশ্চর্য কীর্তি আইনজীবীর

এককালে সবুজের চিহ্নমাত্রও ছিল না এখানে। ফাঁকা, পরিত্যক্ত এই জমি ছিল আবর্জনার আঁতুড় ঘর। হঠাৎ সেখানেই দেখা গেল গাছের সারি। পরিত্যক্ত এই জমি, যা কিনা সরকারি সংস্থার অধীনে, সেখানে আপনা থেকে কি করে এত গাছ গজিয়ে উঠল? এই সব প্রশ্ন, বিস্ময়ের মাঝে থেকে যান মন্টু হাইত।

পেশায় উকিল মন্টুবাবুর একার চেষ্টায় দক্ষিণ কলকাতার বুকে তৈরি হয়েছে এই ছোট্ট জঙ্গল। নিউ আলিপুর স্টেশনের কাছেই এই জায়গাটি আসলে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট ও রেলওয়ের অধীনে রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন অযত্নে, অব্যবহারে পড়েছিল এটি। আস্তে আস্তে বর্জ্য ফেলার জায়গায় পরিণত হয়। এসবই সামনে থেকে দেখেছেন মন্টু হাইত। ছোট থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে যার ওতপ্রোত সম্পর্ক। পশু-পাখি, গাছপালা এসব নিয়েই ভালবাসা তাঁর। এই বিস্তীর্ণ ফাঁকা জমিতে যদি একটা ছোটখাটো জঙ্গল বানানো যেত, যদি লাগানো যেত নানা রকমের গাছ— এই কথাই বারবার ভেবেছেন তিনি।

কিন্তু উল্টোদিকে সমস্যার কথাটিও বিলক্ষণ জানতেন। যেহেতু জায়গাটি সরকারের, তাই এর ব্যবহারের বৈধতা ছিল না। একজন আইনজীবী হিসেবে সেই কথাটাও মাথায় রেখেছিলেন। তাহলে এই জমি এমন ভাবেই থাকবে? ভেবেচিন্তে উপায় বার করলেন মন্টুবাবু। ‘গেরিলা পদ্ধতিতে’ নিজের পরিকল্পনা সাজালেন। দশ বছর ধরে তিনি ওই জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা ও বীজ পুঁততে লাগলেন। অবশ্য তার আগে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টকে একটি লিখিত আবেদনও করেন এই কাজের জন্য। মন্টুবাবুর জায়গা বলে বিবেচ্য না হলেও, তাঁর এই বৃক্ষরোপণের কাজে কখনও বাধা দেননি পোর্ট ট্রাস্টের কর্তারা।

দীর্ঘ এক দশকের ব্যর্থতা, সাফল্যের পর মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে এই জায়গাটি। এক সময় গোটা এলাকা যাকে জানত পরিত্যক্ত আবর্জনা ফেলার জমি হিসেবে, আজ সেটা সবুজে ভরে গেছে। বর্তমানে ১৫০টি প্রজাতির প্রায় ২৫ হাজার গাছ এখানে রয়েছে। শুধু তাই নয়, হরেক রকম প্রজাপতি, বক, পরিযায়ী পাখিদেরও আনাগোনা চলে এখানে। আশেপাশের বাসিন্দারাও এগিয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। মন্টু হাইতের মুখে আজ বিজয়ীর হাসি। বর্জ্যের দুর্গন্ধ নয়, হাজার হাজার কংক্রিটের ভিড়ে আলিপুরের এই জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে সবুজের স্পর্শ।

More From Author See More

Latest News See More