বিপদসীমা অতিক্রম করেছে রাসায়নিক দূষণ, চিন্তিত গবেষকরা

সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশ সম্পর্কে অনেকটাই সচেতন হয়েছে সাধারণ মানুষ। অন্তত বায়ুদূষণ কিংবা প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের সম্পর্কে কমবেশি ধারণা রয়েছে সকলেরই। চলছে নানাধরনের ক্যাম্পেনও। তবে এসবের বাইরে প্রকৃতিতে নীরবেই বিষক্রিয়া ঘটিয়ে রাসায়নিক বর্জ্য (Chemical Pollution)। এবং তার জেরে পরিবেশ দূষণের মাত্রা ছাপিয়ে গেছে বিপদসীমা। মানুষ তো বটে, যার কারণে কোণঠাসা গোটা বাস্তুতন্ত্র। এবার এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনলেন বিজ্ঞানীরা। 

‘ইউরোপিয়ান এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি’ (European Environment Agency)। এই আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে তেমনটাই। গোথেনবার্গ, ওসলো, স্টকহোম-সহ একাধিক খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জড়িত ছিলেন এই গবেষণার সঙ্গে। তাঁদের গবেষণায় উঠে আসছে বিগত সাত দশকে রাসায়নিক বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫ গুণ। আগামী তিন দশকের মধ্যে তা আরও ৩ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলেই আশঙ্কা গবেষকদের। অর্থাৎ, ১৯৫০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে রাসায়নিক দূষণের বৃদ্ধি আনুমানিক ১৫ গুণ। যার পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলেই অনুমান বিজ্ঞানীদের। 

ইউরোপীয় সংস্থাটির সমীক্ষা জানাচ্ছে, বর্তমানে বৈশ্বিক বাজারে উপলব্ধ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক কৃত্রিম রাসায়নিক ও সিন্থেটিক দূষক। প্লাস্টিক ছাড়াও যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কীটনাশক এবং শিল্পজাত বর্জ্য। আবার মানুষের ব্যবহৃত অতি-সাধারণ জিনিসও ভয়াবহ রাসায়নিক দূষণের জন্য দায়ী। উদাহরণ স্বরূপ গবেষকরা উল্লেখ করছেন কাগজ কিংবা সারের কথা। রাসায়নিক সার শুধু মৃত্তিকা দূষণই নয়, মানুষের স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে বর্তমানে কাগজের কাপ এবং ব্যাগকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তা জৈববিয়োজ্য ঠিকই, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাগজের গায়ে ছাপার কালির উপস্থিতিই তাকে পরিণত করছে দূষকে। 

চর্মরোগ থেকে শুরু করে, শ্বাসতন্ত্র এবং পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতিসাধণ করছে এইসব রাসায়নিক বর্জ্যগুলি। ক্যানসারের মতো ভয়াবহ পরিণতির জন্যেও দায়ী তারা। তবে সবথেকে আশঙ্কার বিষয় হল, পৃথিবীতে প্রাপ্ত সমস্ত রাসায়নিক বর্জ্যগুলির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে এখনও সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি গবেষকরা। বা, বলা ভালো সম্ভব হয়ে ওঠেনি তাদের মূল্যায়ন। কাজেই সকলের চোখের আড়ালেই ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে বহু জানা-অজানা রাসায়নিক সেই সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কী?

আরও পড়ুন
কাচের তৈরি বর্জ্য থেকে কৃত্রিম বালি, দূষণরোধের পথ দেখাচ্ছে মার্কিন সংস্থা

গবেষকরা জানাচ্ছেন, একমাত্র রাসায়নিক বর্জ্যের সঠিক প্রক্রিয়াকরণই খানিকটা কমাতে পারে দূষণের পরিমাণ। কিন্তু তার জন্য কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে। শক্ত করতে হবে আইনি ব্যবস্থাকে। রাষ্ট্রনেতাদের কাছে সেই আবেদনই রাখছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেই পদক্ষেপ নিতে কত সময় নেবেন শক্তিধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছেই…

আরও পড়ুন
প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারই দূষণের সমাধান, পথ দেখাচ্ছে জয়পুরের কিশোরী

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ভয়াবহ দূষণের শিকার গঙ্গার দক্ষিণ প্রবাহ, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক সমীক্ষা