পরের জন্মে তামিল হতে চেয়েছিলেন নেতাজি!

একদিন নেতাজি সুভাষ সিঙ্গাপুর রেডিওর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। উনি আমাদের ভাই ও বন্ধু বলে সম্বোধন করেছিলেন। আমাদের বিদায় জানিয়েছিলেন আর বলেছিলেন তিনি কোথায় যাচ্ছেন তা তিনি নিজেই জানেন না।

ওপরের কথাগুলি সি এম পান্ডিরাজের। বয়স ৯৩ বছর। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-র আজাদ হিন্দ ফৌজের একমাত্র জীবিত সদস্য তিনি। থাকেন তামিলনাড়ুর রমানাধিপুরমের একটি খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরে। তাও নিজের নয়, ভাড়ার। এমনই করুণ অবস্থার মধ্যে দিন কাটছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের শেষ জীবিত সদস্যের। সরকারের কাছে বহু আবেদন নিবেদনের পরেও মাথার ওপর আজও কোনো ছাদ নেই এই বৃদ্ধের। হ্যাঁ, স্বাধীন ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামীরই এই অবস্থা।

'পরে ১৯৪৬-এ শুনতে পেলাম তাইওয়ানের বিমান দুর্ঘটনায় তিনি নাকি মারা গেছেন।'

অথচ আজও তিনি বুঁদ সেই সোনালি দিনগুলির কথায়। বলেন, ‘তখন ১৯৪৩। আমায় বয়স ১৭। তখন মায়ের সঙ্গে আমি মালয়েশিয়ায় থাকি। তখন নেতাজির কিছু শিবিরের গরিলা দলে আমি কাজ করেছি। ১৯৪৫-এ জাপানে বোমা পড়ার ফলে জাপান আজাদ হিন্দ বাহিনীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সেনা দিয়ে সাহায্য করতে পারেনি। ব্রিটিশরা আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাদের গ্রেফতার করেছিল। এমনটি না হলে নেতাজির অধীনে আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারতকে ব্রিটিশ মুক্ত করতে পারত। এ-ঘটনায় নেতাজি দুঃখ পেয়েছিলেন।’

ভারত সরকার কখনওই প্রাপ্র্য মর্যাদা দেয়নি আজাদি সৈনিকদের।

স্মৃতি থেকে উঠে আসে আরও আকর্ষণীয় তথ্য। পান্ডিরাজ বলেন, নেতাজি রেডিও-র মাধ্যমে তাঁদের ফিরে যেতে বলেছিলেন নিজেদের পরিবারের কাছে। বলেছিলেন, যদি পুনর্জন্ম বলে কিছু থাকে তাহলে তিনি তামিল হয়ে জন্মাবেন। পান্ডিরাজের কথায়, ‘ফিরে যাওয়ার কথা শুনে আমি চিৎকার করে কেঁদেছিলাম। পরে ১৯৪৬-এ শুনতে পেলাম তাইওয়ানের বিমান দুর্ঘটনায় তিনি নাকি মারা গেছেন।’

কথায় বলে, স্মৃতি সততই সুখের। কিন্তু স্মৃতি দিয়ে বর্তমান কাটে না। তাঁর অবস্থা সত্যিই করুণ। ভারত সরকার কখনওই প্রাপ্র্য মর্যাদা দেয়নি আজাদি সৈনিকদের। এখনও সেই ধারা চলছে। শেষ বয়সে পৌঁছে, পান্ডিরাজের কি দেশবাসীর কাছ থেকে যথার্থ সম্মান প্রাপ্য ছিল না?

সৌজন্য - awesomemachi.com