একুশ শতকে দাঁড়িয়ে ‘আবহাওয়া পরিবর্তন’ শব্দবন্ধটির সঙ্গে পরিচিত নন, এমন মানুষ পাওয়া বিরল। তবে সকলেই কি ওয়াকিবহাল এই নিঃশব্দ ঘাতকের ব্যাপারে? বোধ হয় না। আর সেজন্যই মানুষকে সচেতন করতে এবার উদ্যোগ নিল নাসা। উপগ্রহের মাধ্যমে সংগৃহীত চিত্র প্রকাশ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব তুলে ধরল আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থাটি। জলবায়ুর পরিবর্তনে নীল গ্রহের ঠিক কেমন রূপান্তর হয়ে চলেছে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তাই ফুটে উঠল তুলনামূলক ছবিতে।
‘ইমেজস অফ চেঞ্জ’ শিরোনামে নাসা প্রকাশ করেছে মহাকাশ থেকে তোলা ছবিগুলির সিরিজ। তবে শুধুই জলবায়ু পরিবর্তন নয়, তার কারণ হিসাবে নগরায়ন, বন্যা, ক্ষরা এবং দাবানলের মতো ঘটনাগুলির জন্যেও পৃথিবীর রূপান্তর ধরা পড়েছে ছবিতে। যার মধ্যে রয়েছে সাহারার তুষারপাত, নিউজিল্যান্ডের সংকুচিত হিমবাহ, মেরুপ্রদেশের বরফগলন, বননিধন ইত্যাদি। প্রতিক্ষেত্রেই কয়েক দশক আগের তোলা পুরনো চিত্রের পাশে সাম্প্রতিক ছবির তুলনা করেছে নাসা।
১৯৮৪ এবং ২০২০ সালে তোলা আর্কটিক অঞ্চলে তোলা বরফের ছবিগুলি অবাক করার মতোই। শুধুমাত্র ৩৬ বছরের মধ্যে অভাবনীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে মেরুর বরফ। নাসার বিজ্ঞানী জোয়া কমিসো জানান, শুধু আয়তনই কমেনি বরফের, সেইসঙ্গে কমেছে বরফ স্তরের অবশিষ্টাংশের গভীরতাও। এই হারে বরফ গলতে থাকলে একুশ শতকের মধ্যেই পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যাবে মেরুর বরফ।
পৃথিবীর ইতিহাসে ২০২০ সালে আর্কটিক বরফের পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে দ্বিতীয় সর্বনিম্নে। অন্যদিকে, আইসল্যান্ডের ‘ওকে’ হিমবাহ গলে গেছে সম্পূর্ণভাবে। দ্রুত গলছে ভারতের কাশ্মীর উপত্যকা এবং সিয়াচেনের বরফও। তবে কারণ একেবারেই সুস্পষ্ট। নাসার ছবিতেই দেখা যাচ্ছে গত ২০ বছরে অদৃশ্য হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে সবুজের একটা বড় অংশের উপস্থিতি। ফলে বেড়ে চলেছে কার্বন নির্গমন। যা শিরে সংক্রান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকৃতির কাছে।
মানব সভ্যতার প্রভাবেই যে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী, তা বিশেষভাবে দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থাটি। তবে মানবসভ্যতার গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনে কতটা প্রভাব ফেলবে এই ছবি, জানা নেই সেই উত্তর। শুধু নীলগ্রহের ধ্বংসের লিখিত দলিল হিসাবেই রয়ে যাবে এই সিরিজ চিত্রগুলি...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিশ্বের ইতিহাসে উষ্ণতম বছর ২০২০, জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনে বাড়ছে আশঙ্কা