প্রস্তরযুগেই থমকে সবকিছু, ‘আধুনিকতা’ থেকে দূরে নিশ্চিন্ত দিনযাপন হিমবা উপজাতির

দক্ষিণ আফ্রিকার ছোট্ট দেশ নামিবিয়া। আধুনিকতার মুখ দেখেছে সদ্য। তবে এখনও তার গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে আছে প্রাচীনতার অসংখ্য চিহ্ন। আমাদের দেশের অতি পরিচিত আদিবাসীদের মতো ঠিক নয়। নামিবিয়ার হিমবা উপজাতির মানুষরা এখনও আঁকড়ে রয়েছে নিজেদের সংস্কৃতি। সেই সংস্কৃতির কিছুটা খোঁজ নিতে শুরু করেছেন লন্ডনের গোল্ডস্মিথ ইউনিভার্সিটির গবেষক জুলস ডেভিডহফ।

ডেভিডহফের কাজটা এক্ষেত্রে বেশ কঠিন। তাছাড়া আর পাঁচটা ইউরোপীয় গবেষকের মতো আধুনিক চোখ দিয়ে এই উপজাতিকে চিনতেও অস্বীকার করেছেন তিনি। একটা সংস্কৃতিকে বুঝতে গেলে বুঝতে হবে সেখানকার মানুষদের। তাদের দেখতে হবে তাদের জীবনের সঙ্গে মিলিয়েই। যে জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে প্রকৃতির সঙ্গে। কুনেনে উপত্যকা আর কুনেনে নদীর সঙ্গে। যে মানুষদের দিন কাটে গরু পালন করে আর জঙ্গলের গাছপাতা সংগ্রহ করে। তবে সেইসঙ্গে আধুনিক নৃতত্ত্ব গবেষণার নানা তত্ত্বকেও ব্যবহার করতে দ্বিধা করছেন না ডেভিডহফ।

প্রথম যেদিন এই গ্রামে এসে পড়েছিলেন, সেদিন মনের মধ্যে ছিল অজস্র সংশয়। এই আধুনিক মানুষকে কি সহজভাবে গ্রহণ করবে গ্রামের মানুষ? তাছাড়া গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষার অনুমতি যদি না পাওয়া যায়! তবে শেষ পর্যন্ত এসব আশঙ্কা টেকেনি। বরং গ্রামের মানুষ বেশ সহজভাবেই গ্রহণ করেছেন অতিথিকে। আধুনিকতার প্রতি তাদের বিদ্বেষ নেই। বরং আধুনিক মানুষই বিদ্বেষের বসে দূরে সরিয়ে রেখেছে এই 'অসভ্য' মানুষদের। এমনটাই মনে করছেন ডেভিডহফ।

তবে শেষ পর্যন্ত এক নতুন আশঙ্কা ঘিরে ধরেছে গবেষককে। একটু একটু করে এখানকার মানুষদের যত চিনেছেন, তত বুঝেছেন, আধুনিকতার এক অদম্য মোহ ঘিরে ধরেছে বর্তমান প্রজন্মকে। আর এই আগ্রাসী মোহের হাত থেকে হয়তো বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা যাবে না আদিম সংস্কৃতিকে। কিন্তু এখনও মানুষের বসবাসের জায়গা দেখলে মনে হয় যেন প্রস্তরযুগের এক সভ্যতায় এসে পড়েছেন। মনে হয় যাত্রা শুধু মাটির উপরে নয়, যাত্রা করেছেন সময়ের রেখা ধরে। ইঁট-কাঠের পৃথিবীতে হাঁপিয়ে উঠলে মানুষ তো এমন একটা জগতের স্বপ্নই দেখে। অথচ সেখানেও ভুরু কুঁচকে তাকাচ্ছে ধূসর পৃথিবী। হয়তো এভাবেই হারিয়ে যায় ইতিহাস। পড়ে থাকে নির্বাক কিছু দলিল।

আরও পড়ুন
ভাইরাসের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রাচীন ভাইকিং উপজাতির মানুষও

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
করোনা ছড়াচ্ছে আমাজনের উপজাতিগুলির মধ্যেও, আশঙ্কায় চিকিৎসকরা