চাঁদের মতো বিশালাকার গহ্বর তৈরি হচ্ছে পৃথিবীতে, উদ্বিগ্ন গবেষকরা

সবুজ প্রান্তর। আর সেই সমতলভূমির মধ্যেই বিশাল বিশাল গর্ত। ক্র্যাটার। ঠিক যেরকম দেখতে পাওয়া যায় চাঁদ কিংবা মঙ্গলে। নিশ্চয়ই কৌতূহল জাগছে, এই নতুন গ্রহের সম্পর্কে? না, অন্য কোনো বর্হিজাগতিক গ্রহ নয়। এই নীলগ্রহের কথাই হচ্ছে। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে সাইবেরিয়া জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এমনই বেশ কিছু ক্র্যাটার। কোথা থেকে উদয় হল এইসব দৈত্যাকার গর্তের?

২০১৪ সাল। হেলিকপ্টার থেকে প্রথম নজরে এসেছিল এমনই একটি ক্র্যাটারের অস্তিত্ব। ইয়ামাল ক্র্যাটার। তার অদ্ভুত চরিত্রের কারণেই সেখানে ভিড় জমাতে থাকেন বিজ্ঞানী ও ভূ-তাত্ত্বিকরা। শুরু হয় গবেষণা। পরবর্তীতে এই একই ধরনের মোট ১৭টি ক্র্যাটার খুঁজে পাওয়া যায় গোটা সাইবেরিয়া অঞ্চলজুড়ে।

বিস্ময়কর এই গর্তগুলির জন্ম নিয়ে প্রথম থেকেই উঠে এসেছিল একাধিক তত্ত্ব। কেউ বলেছিলেন বিশালাকার উল্কার সংঘর্ষে তৈরি হয়েছে তারা। আবার কেউ এইসব গর্তের জন্য দায়ী করেছিলেন ভিনগ্রহী প্রাণীদের। রহস্যের জট কাটতে সময় লাগে বেশ অনেকটাই। শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা জানান, ভূতাত্ত্বিক বিস্ফোরণের কারণে তৈরি হয়েছে গর্তগুলি। হ্যাঁ, বিস্ফোরণ। কিন্তু কীভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিস্ফোরিত হচ্ছে পৃথিবী?

গবেষকরা জানাচ্ছেন, সাইবেরিয়ার এই অঞ্চলটি প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার। এমনকি ক্র্যাটারগুলির রাসায়নিক উপাদান পরীক্ষা করেও মিথেনের অস্তিত্ব পেয়েছেন গবেষকরা। সেই মিথেনের নির্গমনের কারণেই এই বিস্ফোরণ। তবে কোনো অগ্নিসংযোগ নয়। মাটির তলায় বন্দি মিথেনের চাপ বাড়তে বাড়তেই এই ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে থাকে। সেই চাপে ছিটকে বেরিয়ে আসে ভূ-মণ্ডলের উপরের অংশ। তৈরি হয় গর্তগুলি।

আরও পড়ুন
ভূখণ্ডের মাত্র ৩ শতাংশে সুস্থ বাস্তুতন্ত্র, জানালেন বিজ্ঞানীরা

একেকটি গর্তের ব্যাস প্রায় ১০০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। গভীরতা প্রায় ৬০-৭০ ফুট বা তারও বেশি। কিন্তু এতদিন তবে বিজ্ঞানীদের চোখ এড়িয়ে গেল কীভাবে ক্র্যাটারগুলি? উত্তর, প্রতিটি ক্র্যাটারই তৈরি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। গবেষকদের সন্দেহ, বিশ্ব-উষ্ণায়নই ত্বরান্বিত করছে এই ভূ-তাত্ত্বিক বিস্ফোরণকে। ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে চাপ বাড়ছে পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ গ্যাস ভাণ্ডারের। আর তার ফলেই বিস্ফোরণ। 

আরও পড়ুন
পরিবেশের হাল ফেরাতে দরকার আদিবাসী ক্ষমতায়ন, উপদেশ জাতিসংঘের

যদিও এটা অনুমানমাত্র। এখনও পর্যন্ত এই রহস্যের সঠিক কোনো সমাধান খুঁজে পাননি গবেষকরা। তার জন্য দরকার বিস্তারিত গবেষণার। তবে সেই সুযোগ মিলবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। কারণ সাইবেরিয়া শীতপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় প্রতিবছরই ক্র্যাটারগুলি ঢেকে যায় ঘন বরফে। গরম পড়লে সেই বরফ গলে তৈরি হয় জল। যার ফলে দ্রত গর্তগুলি তলিয়ে যাচ্ছে জলের তলায়। এই গর্তের কারণে পৃথিবীর পরিবেশে ঠিক কী ধরনের প্রভাব পড়তে চলেছে আগামীদিনে, তাও স্পষ্ট নয় বিজ্ঞানীদের কাছে। আর সেই কারণেই ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে তাঁদের। অভিমত, নীরবেই শুরু হয়ে গেছে অজানা এক ধ্বংসযজ্ঞ…

আরও পড়ুন
ভূ-উষ্ণায়ন ঠেকানোর আশা দেখাচ্ছে বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নেওয়ার প্রযুক্তি

Powered by Froala Editor