পিরামিডের মধ্যে পশুপাখির মমি, সঙ্গে সৌরবিজ্ঞানের নমুনা – চমকপ্রদ আবিষ্কার মিশরে

কায়রো শহরের দক্ষিণে ৩০ কিলোমিটার দূরে। মাটির নিচে হঠাৎই পাওয়া গেল এক প্রাচীন জনবসতির খোঁজ। মিশরের আর পাঁচটা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে যেমন থাকে, এখানেও আছে একটি পিরামিড। ২০১৮ সালে সেই পিরামিডের ভিতরে অনুসন্ধান চালান প্রত্নতাত্ত্বিকরা। সেদিনের সেই আবিষ্কার রীতিমতো অবাক করেছিল তাঁদের। পিরামিডের নিচে মমি থাকবে, এটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু সাকারা অঞ্চলের পিরামিডের নিচে সমস্ত মমি বিভিন্ন পশুপাখির।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা বুঝলেন, প্রাচীন মিশরীয়রা এইসমস্ত প্রাণীদের পবিত্র বলে মনে করত। তাই তাদের মৃত্যুর পর মানুষের মতোই মমি বানিয়ে তাদের মাটির নিচে শায়িত করা হয়েছে। তবে এখানেই অনুসন্ধান শেষ হয়নি। আর তাই সম্প্রতি আরও এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের সন্ধান পেলেন তাঁরা।

প্রাচীন পশুপাখিদের সেই সমাধিক্ষেত্র থেকেই একটি সংকীর্ণ পথ দিয়ে গবেষকরা পৌঁছে গেলেন আর একটি চেম্বারে। সেখানে শায়িত রাজার মৃতদেহ। আর সেই চেম্বারের চারিদিকে ৩৬৫টি ঊষাবতী মূর্তি। প্রতিটি মূর্তির সঙ্গে হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে কিছু সংকেত লেখা। সংকেত দেখে গবেষকদের অনুমান, সারা বছরের সূর্যের নানা দশার বর্ণনা দেওয়া আছে সেখানে। অর্থাৎ ৩৬৫ দিনে বছরের হিসাব তখন থেকেই করতে পেরেছিলেন মিশরীয়রা। আনুষঙ্গিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গবেষকরা মনে করছেন আনুমানিক ২৬৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই পিরামিড নির্মিত হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতার যা প্রায় ঊষাকাল। সেই প্রাচীন কালেও মিশরীয়দের এই জ্ঞান অবাক করেছে ইতিহাসবিদদের।

মিশরীয় সভ্যতার নানা ক্ষেত্রে সূর্যের প্রতি তাদের আকর্ষণ দেখা যায়। পিরামিড তৈরি হয় সূর্যের দেবতা রা-এর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই। তবে পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তেই যখন চান্দ্রমাসের উপর নির্ভর করত মানুষ, মিশরীয়রা তখন আধুনিক সৌরমাসের হিসাব শুরু করে দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, বছরে ৩৬৫ দিনের নিখুঁত হিসাবও করতে পেরেছিল তারা। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এই সভ্যতায় মানুষের নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ঐতিহাসিকদের অবাক করেছে। আজও অবাক করছে একইভাবে।

More From Author See More

Latest News See More