স্বল্প অথবা বিনা মজুরিতে কাজ, সঙ্গে সংসারের দায়িত্ব; এমনই পরিস্থিতি মহিলাদের

করোনার বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে জনজীবন। আবার কর্মক্ষেত্রে ফিরছেন মানুষ। কিন্তু দেশের কর্মসংস্কৃতি কতটা উন্নত? তাতে নানা ধরনের মানুষের অংশগ্রহণই বা কীরকম? এমনই নানা প্রশ্ন তুলে দিল ন্যাশানাল সার্ভিস স্কিমের সাম্প্রতিক সমীক্ষার রিপোর্ট। আর তাতে দেশের লিঙ্গবৈষম্যের চেহারাটাও স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠল আরেকবার।

এই প্রথম দেশের কর্মসংস্কৃতি নিয়ে সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করল এনএসএস। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পাওয়া তথ্য নিয়ে প্রকাশিত হল ‘টাইম ইউজ সার্ভে ২০১৯’। এনএসএস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মাত্র ৩৮.২ শতাংশ মানুষ সরাসরি কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। বাকিরা বেকার অথবা অন্যের উপর নির্ভরশীল। আর এখানেও স্পষ্ট লিঙ্গবিভাজন। যেখানে সমস্ত পুরুষের মধ্যে ৫৭.৮ শতাংশই কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত, সেখানে মহিলাদের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ১৮.৪ শতাংশ। তবে শুধু এখানেই শেষ নয়। আজও যে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব মহিলাদের ঘাড়েই ঠেলে দেওয়া হয়, সেটা আরও একবার প্রমাণিত হল সমীক্ষায়।

রিপোর্টের উল্লেখ অনুযায়ী দেশের প্রত্যেক মহিলা গড়ে ৫ ঘণ্টা সময় দেন সংসারের কাজে। কারোর কারোর ক্ষেত্রে সেটা ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত হয়ে যায়। সেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে সংসারের জন্য দেওয়া সময়টা গড়ে দেড় ঘণ্টার কিছু বেশি। অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রেও পুরুষের তুলনায় মহিলাদের মজুরি কম। সংসারের কাজ সামলে কর্মক্ষেত্রে দেওয়া সময়ও কম। একেকজন পুরুষ যেখানে প্রায় ৭ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় দেন গড়ে, মহিলাদের ক্ষেত্রে সেটা ৫ ঘণ্টার কিছু বেশি। মহিলাদের সারাদিনের বেশিরভাগ সময়টাই যায় সংসারের কাজে অথবা অন্যান্য বিনা মজুরির কাজে।

এছাড়াও দেখা গিয়েছে ভারতীয়দের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবামূলক সামাজিক কাজের প্রবণতা বেশ কম। অবসর সময়ে গল্প, আড্ডা, জমায়েত বা ধর্মীয় কাজে সময় ব্যয় করলেও কোনো গোষ্ঠীভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে মানুষের অংশগ্রহণ ভগ্নাংশেও আসে না। তবে যেহেতু এধরনের সমীক্ষা এই প্রথম, তাই সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কোন দিকে এগোচ্ছে সেকথা বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু দেশের কর্মসংস্কৃতির একটা বড় ফাঁক যে এই সমীক্ষায় উঠে এল, তাকে ঠিকমতো মেরামত করতে না পারলে দেশের সামগ্রিক উন্নতি অধরাই থেকে যাবে।

আরও পড়ুন
মহিলাদের বুকে কান পেতেই হৃদস্পন্দন শোনা! শালীনতা বজায় রাখতে জন্ম স্টোথোস্কোপের

Powered by Froala Editor

More From Author See More