নাইজেরিয়ার স্কুল থেকে অপহৃত তিন শতাধিক ছাত্রী, প্রশ্ন উঠছে সরকারের ভূমিকা নিয়ে

উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ার জামফারার একটি স্কুল থেকে অপহৃত ৩ শতাধিক ছাত্রী। গত শুক্রবার সকালে এমন অমানবিক ঘটনার সাক্ষী হয় নাইজেরিয়া। জামদারার জাঙ্গাবেত অঞ্চলের ওই আবাসিক স্কুলে প্রবেশ করে প্রায় কয়েক ডজন দুষ্কৃতির সশস্ত্র দল। তারপর গাড়ি করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয় গভীর অরণ্যে। সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়ায় সবথেকে বড়ো গণ-অপহরণ হিসাবেই বিবেচনা করা হচ্ছে এই ঘটনাকে।

কিন্তু কেন এই অপহরণ? পুলিশের বিবৃতিতে জানানো হয়, এই ধরণের অপহরণ করে বিপুল অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করে দুষ্কৃতিরা। তবে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনো দাবি আসেনি তাঁদের কাছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ বুহারি আশ্বস্ত করেছেন, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক লক্ষ্য নিরাপদ ও জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা ছাত্রীদের। তাই দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে এক্ষুনিই বিশাল সেনাবাহিনী নামাচ্ছে না প্রশাসন।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে প্রতিবেশী নাইজার প্রদেশেও একই রকম একটি অপহরণের ঘটনা ঘটে কাগারা অঞ্চলে। ৪২ জন ছাত্রকে আটক করা হয়। মুক্তির কথা জানান হলেও এখনও পর্যন্ত ছাড়া হয়নি তাদের। তাছাড়াও গত ডিসেম্বরে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং ২০১৪ সালে ২৭৬ জন ছাত্র-ছাত্রী অপহরণের শিকার হয়েছিল। তার ওপরে আরও একটি বৃহত্তর অপহরণ যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া নাইজেরিয়া প্রশাসনের কাছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে। বার বার এই ধরণের ঘটনার সাক্ষী থাকার পরেও কেন সতর্ক হতে পারছে না নাইজেরিয়া প্রশাসন? পাশাপাশি সরকারের তরফে এও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অপরাধীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে না প্রশাসনিক স্তরে। কাজেই আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে নাইজেরিয়ার গ্রামীন স্কুলগুলির পরিস্থিতি।

আরও পড়ুন
বন্যা-মোকাবিলায় ভাসমান গোটা শহর, ইউরোপকেও টেক্কা দিচ্ছে নাইজেরিয়ার লাগোস

২০১৮ সালে চিবোকে ঘটে যাওয়া এমনই একটি অপহরণের ঘটনার পর নাইজেরিয়ায় নেওয়া হয়েছিল একটি কর্মসূচি। ‘সেফ স্কুল ইনিসিয়েটিভ’। তাতে বলা হয়েছিল, নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রতিটি স্কুলের চারদিকে লাগান হবে বিশেষ ফেন্সিং। তিন বছরের জন্য সেই প্রোজেক্টে ধার্য করা হয়েছিল ২ কোটি মার্কিন ডলার। যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসঙ্ঘের শিক্ষা বিভাগীয় প্রধান গর্ডন ব্রাউন এই প্রোজেক্টকে সমর্থন জানিয়ে অনুদান পাশও করিয়েছিলেন। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এখনও এই ধরণের কোনো ফেন্সিং নির্মিত হয়নি বলেই উঠে আসছে অভিযোগ।

পাশাপাশি নাইজেরিয়ার একাংশের অভিযোগ দেশে চাকরির অভাবই আরও চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে এই বিশৃঙ্খলাকে। সেদিক থেকেও সামনে আসছে প্রশাসনের ব্যর্থতাই। সব মিলিয়ে ‘রুটিন’-এ পরিণত হওয়া এই ঘটনার সমাধান খুঁজতে কী পদক্ষেপ নেয় নাইজেরিয়া সরকার, এখন দেখার সেটাই…

আরও পড়ুন
সন্ত্রাসবাদের প্রকোপ চলবে আরও ২০ বছর, সতর্ক করলেন নাইজেরিয়ার সেনাপ্রধান

Powered by Froala Editor