২৫ হাজার মানুষের সৎকার করেছেন নিজেই, পদ্মশ্রী ৮২ বছরের বৃদ্ধের

পড়ে আছে বেওয়ারিশ লাশ। শেষকৃত্য করার মতোও নেই কেউ। এমনই অসহায় অবস্থায় দেবদূতের মতো হাজির হন তিনি। ধর্ম, জাতিকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজের দায়িত্বে তাঁদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। শুধু তাই নয়, অনেক মরণাপন্নের জীবনও বাঁচিয়েছেন তিনি। ‘শরিফ চাচা’ বললেই আজ সবাই এক ডাকে চেনে তাঁকে। সেই মহম্মদ শরিফই এই বছর পেতে চলেছেন পদ্মশ্রী পুরস্কার।

উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদের ৮২ বছরের সাইকেল মেকানিক মহম্মদ শরিফ। প্রথম থেকে সেটাই ছিল তাঁর পরিচয়। সমস্ত কিছু বদলে গেল ১৯৯২ সালে। ছেলে মহম্মদ রইস চাকরি পেয়ে সুলতানপুর চলে যায়। হঠাৎই সেখান থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। কোনো খোঁজ খবর ছিল না। ঠিক এক মাস পর, রইসের পচা-গলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খুন করা হয়েছিল বলে জানায় পুলিশ।

আঘাত পেয়েছিলেন, চরম আঘাত। নিজের চোখে দেখেছিলেন সন্তানের বিকৃত দেহ। তারপরেই সিদ্ধান্ত নেন, মৃত্যুকে এত ছোটো হতে দেবেন না তিনি। যেকোনো মানুষের ঠিকঠাক শেষকৃত্য করা উচিত। এই জীবন, এই মৃত্যুকে সম্মান জানানো উচিত। তখন থেকেই, যেকোনো বেওয়ারিশ লাশ নিজের দায়িত্বে নিয়ে যান গোরস্থানে, শ্মশানে। সেখানে কোনও ধর্ম দেখেন না তিনি। মৃত্যুর ৭২ ঘণ্টা পরও মানুষটির কোনো পরিজন না এলে, পরিজন হয়ে ওঠেন শরিফ চাচা। বিগত ২৫ বছরে ২৫ হাজারেরও বেশি অজ্ঞাতপরিচয় মানুষের দেহ সৎকার করেছেন তিনি। তার মধ্যে ৩০০০-এরও বেশি হিন্দু রয়েছে…

তবে শুধু সৎকারই করেননি, এই কাজ করতে গিয়ে বাঁচিয়েওছেন অনেক প্রাণ। মৃতপ্রায়, আহত মানুষদের হাসপাতালে সময়মত পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। এসবের জন্যই তিনি আজ ‘পদ্মশ্রী’। সমাজসেবা আজও একমাত্র ব্রত মহম্মদ শরিফের। মানবতাই তাঁর একমাত্র ধর্ম।