পৃথিবীর বুকে গভীরতম গর্ত খুঁড়তে চলেছেন বিজ্ঞানীরা

পৃথিবীর পাথর, মাটি আর পাহাড়ের আস্তরণের নিচে কী লুকিয়ে রয়েছে— প্রাচীনকাল থেকেই তা জানার আগ্রহ মানুষের। মাটি খুঁড়ে ভূগর্ভস্থ শহর কিংবা সমাধিক্ষেত্র নির্মাণ তো বটেই, খনিজ উত্তোলনের জন্যও পৃথিবীর বুকে খননকার্য চালিয়েছে মানব সভ্যতা। তবে মানবসৃষ্ট গভীরতম গর্ত হিসাবে ধরে নেওয়া হয় সোভিয়েতের করা কোলা সুপারডিপ বোরহোলকে। যার গভীরতা ৪০ হাজার ফুট বা ১২ কিলোমিটার। এবার পৃথিবীর বুকে তার থেকেও গভীরতর গর্ত (Deepest Hole) করতে চলেছে এমআইটি-র (MIT) স্পিন-অফ কোম্পানি।

কোয়েস এনার্জি নামে পরিচিত এই মার্কিন সংস্থা বিগত বেশ কিছু কাল ধরেই কাজ চালিয়ে আসছে ভূ-তাপীয় শক্তি উৎপাদনের ওপর। এবার তাঁদের সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, পৃথিবীর ম্যান্টেলের বা অভ্যন্তরীয় স্তরের কাছাকাছি পৌঁছালে সীমাহীন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন শক্তির সন্ধান পেতে পারে সভ্যতা। আর সেই লক্ষ্যেই এই গর্ত খননের উদ্যোগ নিয়েছেন মার্কিন গবেষকরা। 

এমআইটির গবেষকদের মতে, অপ্রচলিত শক্তির মধ্যে বায়ু ও সৌরশক্তির জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। তুলনামূলকভাবে ভূগর্ভস্থ তাপীয় শক্তির ব্যবহার প্রায় হয় না বললেই চলে। তবে বায়ু কিংবা সৌরশক্তির চেয়ে ভূগর্ভস্থ শক্তিই বেশি কার্যকর হয়ে উঠতে পারে আগামীদিনে। এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছেন তাঁরা। সাধারণত, বায়ুকল বা সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্রয়োজন পড়ে। পাশাপাশি এই শক্তির পরিমাণও তাপ বা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত শক্তির সমতুল্য নয়। সেখানে ছোট্ট গর্ত খননের মাধ্যমে পৃথিবীর ম্যান্টেলের কাছে পৌঁছতে পারলেই মানুষের হাতে আসবে সীমাহীন শক্তি। যা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম আস্ত একটি দেশকে। 

এমআইটি এবং প্লাজমা সায়েন্স অ্যান্ড ফিউশন সেন্টারের যৌথ গবেষণায় তৈরি হয়েছে গাইরোট্রন নামের অত্যাধুনিক কাটিং টুল। যা পৃথিবীর বুকে অনায়াসেই খনন করতে সক্ষম গভীরতম গর্ত। কমপক্ষে যার গভীরতা ২০ কিলোমিটার। পাশাপাশি এই যন্ত্র পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রে তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের রশ্মিগুলি থেকে শক্তি উৎপাদন করতে পারবে বলেই আশাবাদী গবেষকরা।

আরও পড়ুন
নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়ায় রেকর্ড পরিমাণ শক্তি নিষ্কাশন, খুলল পদার্থবিদ্যার নতুন দিগন্ত

ইতিমধ্যেই প্রস্তুতিপর্ব শুরু হয়েছে এই বৃহৎ প্রকল্পের। প্রায় ৬ কোটি ডলারের বাজেটও প্রকাশ করেছে এমআইটির সংগঠনটি। শুরু হয়েছে তহবিল তৈরির কাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালেই শুরু হবে খননকার্য। আরও বছর দুয়েক পরে শুরু হতে পারে শক্তিকেন্দ্র স্থাপনের কাজ। তাতে শুধু বিজ্ঞানের একটি নতুন দরজাই খুলে যাবে না, বদলে যেতে পারে মানবসভ্যতার সামগ্রিক ছবিও…

আরও পড়ুন
কয়লার যোগান নেই, তবু অচিরাচরিত শক্তিতে অনাগ্রহী কেন্দ্র!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দুর্গাপুজোয় খরচ ১৭ টাকা, শক্তি-আরাধনা করেই কপাল ফিরল সাহেবের