শিশুদের মাস্ক পরিয়ে পরমাণু বিস্ফোরণের প্রভাব এড়াতে চেয়েছিল হিরোশিমা!

অন্যান্য দিনের মতোই আরেকটা সকাল ছিল সেদিন। একটু একটু করে ব্যস্ত জীবনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল হিরোশিমা। এমন  সময় মাথার উপর শব্দ করে ফেটে পড়ল এক অভিশাপ। লিটল বয়। দিনটা ৬ আগস্ট, ১৯৪৫। আজও সেই দিনের নৃশংসতা মানুষকে অবাক করে। সেই অভিশাপ আজও বয়ে চলেছেন হিরোশিমার মানুষ হিরোশিমা এবং নাগাশাকি। যেখানে আবার পরমাণু বোমা আছড়ে পড়েছিল ৯ আগস্ট।

পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ইতিহাসে এই প্রথম। তাই তার প্রতিক্রিয়া কী কী হতে পারে, সে সম্বন্ধে কোনো ধারণাই ছিল না কারোর। যেন সাধারণ একটা বোমাই ফেটেছে শুধু। হ্যাঁ, তীব্রতা বেশ কিছুটা বেশি। মৃতের সংখ্যা বেশি। কিন্তু যাঁরা আহত তাঁদের জন্য চিকিৎসার আয়োজন খুবই সামান্য। অথচ সমস্যার সমাধান তাতে হল না কিছুই?

১৯৪৫ সালে ঘটল বিস্ফোরণ। কিন্তু তার প্রভাব কতটা দীর্ঘস্থায়ী ছিল তার একটা উদাহরণ পাওয়া যায় ১৯৪৮ সালের একটি ফোটগ্রাফে। তাতে দেখা যায় হিরোশিমার কয়েকজন শিশুকে। প্রত্যেকের মুখেই আছে মাস্ক। মানে ঠিক আজকাল করোনা ভাইরাস রুখতে আমরা যেমন মাস্ক পরে রাস্তায় বেরোচ্ছি। তখনও ব্যবস্থা ছিল তেমনই। তবে তার কারণ কোনো ভাইরাস নয়। আসলে ৩ বছর আগে যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তার ফলে তখনও ধোঁয়ায় ঢাকা ছিল শহর। কিন্তু যে ধোঁয়া যে ছিল পরমাণু বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্টি। তাই মাস্কে তাকে আটকাতে পারার কথা নয়। কিন্তু এর থেকে বেশি কিছু তখনকার চিকিৎসকরা ভাবতে পারেননি।

হিরোশিমা বিস্ফোরণে এক মুহুর্তে অন্তত ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু এই পরিসংখ্যান দিয়ে হয়তো তার তীব্রতা কিছুই বোঝা যায় না। কারণ তার প্রভাব ছিল মূলত মানুষের জিনে। আর সেই প্রভাব চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। বিস্ফোরণের ফলে যেমন অনেকে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েছেন। তেমনই আবার পরবর্তী প্রজন্মে অনেকে জন্মেছেন বিকলাঙ্গ অবস্থায়। কারোর দৃষ্টিশক্তি নেই তো কারোর চামড়ার স্তর ক্রমশ ক্ষয়ে গিয়েছে। ইতিহাস তাঁদের মনে রেখেছে ‘হিবাকুশা’ নামে। তবে যুদ্ধের শিকার এই মানুষদের দুর্দশার ভিতর দিয়েই আমরা জানতে পেরেছি পারমাণবিক প্রভাবের নানা দিক। এমনকি কীভাবে আমরা তার প্রভাব কমাতে পারব, তার ধারণাও পাই এই ঘটনা থেকেই।

আরও পড়ুন
পরমাণু বিস্ফোরণের ধাক্কা সামলেও বেঁচে আছে হিরোশিমার ১৭০টি গাছ

Powered by Froala Editor

More From Author See More