আবর্জনার স্তূপ বদলে গেল অরণ্যে, নেপথ্যে মেঙ্গালুরুর জিৎ

কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার ‘পচনাদি ডাম্পিং গ্রাউন্ড’। বলতে গেলে, এই আস্তাকুঁড় কলকাতার ধাপা বা গাজিয়াবাদের প্রতাপ বিহারের একটি ছোটো সংস্করণ। মেঙ্গালোরের অন্যতম দূষণপ্রবণ অঞ্চল হয়ে উঠেছিল এই বিশেষ অঞ্চল। গোটা অঞ্চলজুড়ে পচা-গলা আবর্জনার দুর্গন্ধ, সেইসঙ্গে প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্য পোড়ানোয় উৎপন্ন বিষাক্ত গ্যাস, দূষিত জলের সমস্যা— সবমিলিয়ে এই অঞ্চলেই টেকা দায় হয়ে উঠেছিল স্থানীয়দের। তবে বর্তমানে এই আবর্জনার স্তূপই চেনাই দায় স্থানীয়দের পক্ষে। এই দূষিত অঞ্চলই যেন বদলে গেছে আস্ত অরণ্যে। 

নেপথ্যে, মেঙ্গালুরুর (Mangalore) বাসিন্দা ও প্রাক্তন প্রযুক্তিবিদ জিৎ মিলান রোচে (Jeeth Milan Roche)। শুধু এই আস্তাকুঁড়ের চেহারা বদলে দেওয়াই নয়, মেঙ্গালুরু শহর ছবিই পাল্টে ফেলেছেন জিৎ। তাঁর সৌজন্যেই সবুজ সামিয়ানায় ছেয়েছে মেঙ্গালুরুর রাস্তাঘাট। 

বছর কয়েক আগের কথা। মহামারী হানা দেওয়ার মাস কয়েক আগে থেকেই একাধিক ব্যক্তিগত সমস্যায় জর্জরিত হয়ে উঠেছিলেন জিৎ। প্রতিকূল পরিস্থিতিকে আরও দমবন্ধ করে তুলেছিল মহামারীর আবহ, গৃহবন্দি দশা। ছেড়েছিলেন চাকরি। ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছিলেন বিষণ্ণতার কোলে। এই সংকট মুহূর্তে আলোর রেখা হয়ে তাঁর সামনে হাজির হয়েছিল গাছ। বাড়িতে বসে থাকতে থাকতেই, তাঁর নজর পড়েছিল বাগানের দিকে। না, বাগান নয়। একসময় যেখানে বাগান ছিল, সেই জায়গাটুকু আজ রুক্ষ জমি। অবসর সময় কাটাতে সেখানেই বাগান তৈরি করার প্রকল্প নিয়েছিলেন তিনি। 

এই প্রকল্পে নামার কয়েকদিনের মধ্যেই নিজের মধ্যে একটা পরিবর্তন টের পান তিনি। তাঁর কথায়, সবুজের আধিক্য এবং সহাবস্থান তাঁকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল মানসিক দিক থেকে সেরে উঠতে। বুঝতে সাহায্য করেছিল, শুধু মানুষ নয়, গাছ সারিয়ে তুলতে পারে প্রকৃতি এবং পরিবেশকেও। সেই শুরু। তারপর থেকে মেঙ্গালুরু শহরকে সবুজ করে তোলার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন তিনি। ‘মেঙ্গালোর গ্রিন ব্রিগেড’-খ্যাত স্বঘোষিত প্রকল্পের অধীনে প্রতিবছর তিনি রোপণ করে চলেছেন ১২ হাজার গাছ। অবশ্য শুধু চারা রোপণ নয়, মিওয়াকি পদ্ধতিতে তাদের চর্চা এবং দেখাশোনার ভারও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। 

মেঙ্গালুরুর রাস্তার দু’ধারে ছাড়াও, শহরের ২৩টিই সমাধিক্ষেত্র, অসংখ্য পার্কে কয়েক হাজার বৃক্ষরোপণ করেছেন জিৎ। সেই তালিকায় রয়েছে ৪২ একর বিস্তৃত ‘পচনাদী ডাম্পিং গ্রাউন্ড’-ও। উল্লেখ্য, এই আবর্জনার স্তূপের জন্য তিনি বিশেষভাবে বেছে নিয়েছিলেন শাল, সেগুন, রোজউড, বট, অশ্বত্থ এবং অন্যান্য মহীরুহদের। জিতের কথায়, এইধরনের গাছ মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে। ফলে ভূমিক্ষয় রোধ হয়। পাশাপাশি এই গাছদের কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে একটি জৈবিক ইকোসিস্টেম, যা জৈব বর্জ্যের দ্রুত পচন ঘটায়। সারিয়ে তোলে পরিবেশকে। 

জিতের এই প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে বিগত তিন বছরেই। ক্রমশ সেরে উঠছে পচনাদীর পরিবেশ। কমছে দুর্গন্ধ। এমনকি ইতি পড়েছে বর্ষায় দূষিত জল গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাতেও। আগামীদিনে শহরের বিভিন্ন আস্তাকুড়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণই একমাত্র হাতিয়ার সভ্যতার, এমনটাই দাবি কর্ণাটকের প্রাক্তন প্রযুক্তিবিদের।  

Powered by Froala Editor