প্রয়াত জ্ঞানপীঠ-জয়ী ‘মহাকবি’ আক্কিথাম আচুথান, অভিভাবকহীন মালায়ালম সাহিত্য

দীর্ঘদিন ধরেই মালায়ালম সাহিত্যকে দেখিয়েছেন এক নতুন দিশা। পরিচিত ছিলেন ‘মহাকবি’ হিসাবে। গতবছরের জ্ঞানপীঠ পুরস্কারপ্রাপক মালায়ালম কবি আক্কিথাম আচুথান প্রয়াত হলেন বৃহস্পতিবার। বেশ কয়েক বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। গত ৩ দিন ভর্তি ছিলেন থ্রিসুরের একটি হাসপাতালে। সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গেই শেষ হল মালায়ালম সাহিত্যের একটি দীর্ঘ অধ্যায়। 

১৯২৬ সালে পলক্কাড় জেলার কুমারনাল্লুরে গ্রামে জন্ম আক্কিথামের। বড়ো হয়ে ওঠা সেখানেই। পড়াশোনা করেছিলেন জ্যোতিষ, সঙ্গীত এবং সংস্কৃতে। উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজে ভর্তি হলেও পরবর্তী সময়ে শেষ করেননি স্নাতক। বরং তাঁকে সেইসময় থেকেই ভাবিয়েছিল মালায়ালম সাহিত্য। মন্দিরের দেয়ালে কবিতা লিপিবদ্ধ করেই শুরু হয়েছিল তাঁর সাহিত্যচর্চা। ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। পত্রপত্রিকায় লেখালিখি শুরু তারপরে। জনপ্রিয়তা হয়ে ওঠে তাঁর লেখা মালায়ালম ভাষার গল্প, কবিতা, প্রবন্ধগুলি। 

তবে সাহিত্যের ক্ষেত্রে ক্রমাগত নিজেকে ভেঙে গেছেন তিনি। কয়েক দশক আগে ধরেই মালায়ালাম কাব্যকে পরিচয় করিয়েছেন ‘অর্থবোধক আধুনিকতা’-র সঙ্গে। ফর্ম ভেঙে নতুন লেখাকে সামনে এনেছেন বারবার। দীর্ঘদিন সম্পাদনা করেছেন ‘উন্নি নাম্বোথিরি’ পত্রিকার। সক্রিয় সমাজকর্মীদের দাঁড়াবার জায়গা হয়ে উঠেছিল এই সাহিত্যপত্র। ‘মঙ্গলদয়ম’ এবং ‘যোগাক্ষেমম’ পত্রিকাতে দায়িত্ব পালন করেছেন সহ-সম্পাদকের ভূমিকায়।

তবে শুধুমাত্র সাহিত্য পত্রিকাতেই নয়। চিত্রনাট্যকার এবং সম্পাদক হিসাবে ভারতীয় বেতার আকাশবাণীতে আক্কিথাম কাজ করেছেন জীবনের একটা বড়ো সময় ধরে। বেদের অধ্যায়নকে জনপ্রিয় করে তুলতে সাহিত্যের মোড়কে নতুন করে উপস্থপনা করেছিলেন আক্কিথাম। ‘শীমদ ভগবতম’-এর মালায়ালম অনুবাদ করেছিলেন তিনি। যার মধ্যে লিপিবদ্ধ রয়েছে সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি পদ। কমিউনিস্ট মানসিকতার কারণে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল এ.এম.এস  নাম্বুদিরিপাদের। সমাজ সংস্কারের কাজে বহুবারই দু’জনে পথে নেমেছেন একই সঙ্গে।

তবে একজন কবি হিসাবেই শুধু নয়, তাঁর জীবনধারণের মধ্যেও মিশে ছিল এক অন্য দর্শন। ছিল আধ্যাত্মিকতার মিশেল। সে কারণেই হয়তো ‘মহাকবি’ আখ্যা পেয়েছিলেন আক্কিথাম। এছাড়াও একাধিকবার সাহিত্যক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান পেয়েছেন তিনি। ১৯৭৩ সালে পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। ২০১৭ সালে পদ্মশ্রী এবং গতবছরেই ভূষিত হয়েছেন জ্ঞানপীঠে।

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ মিলিয়ে প্রায় ৪৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন আক্কিথাম। যা মালায়ালম ভাষার অন্যতম সম্পদ। আক্কিথাম চলে গেলেন ঠিকই। তবে সন্ধান দিয়ে গেলেন মালায়ালম সাহিত্যের নতুন দিগন্তের। তাঁর তৈরি এই আধুনিকতার হাত ধরেই যে উঠে আসবে হাজার হাজার নতুন ধারা, তা বলার অপেক্ষা থাকে না...

আরও পড়ুন
নোবেলজয়ী কবি লুইস গ্লুকের নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ

Powered by Froala Editor