বিজ্ঞানীদের উদ্যোগে ফিরতে চলেছে হারিয়ে যাওয়া ‘রাজকীয়’ মাছ

দৈর্ঘ্যে মানুষের থেকেও বেশ খানিকটা লম্বা। সারা গা ঢাকা কুমিরের মতো মোটা, কাঁটাওয়ালা বর্মে। আজ থেকে প্রায় সাতশো বছর আগের কথা। চতুর্দশ শতকে এই মাছটিকে ‘রাজকীয় মাছ’-এর তকমা দিয়েছিলেন ব্রিটেনের রাজা দ্বিতীয় এডওয়ার্ড। অথচ, একুশ শতকে দাঁড়িয়ে আজ ইংল্যান্ডের বুকে এই রাজকীয় মাছের দেখা পাওয়াই দুষ্কর ব্যাপার। প্রাচীন এই প্রজাতিটিকে ফিরিয়ে আনতেই এবার বিশেষ উদ্যোগ নিল জুওলজিক্যাল সোসাইটি অফ লন্ডন (Zoological Survey of London)। 

স্টারজিওন (Sturgeon)। হ্যাঁ, বিজ্ঞানীদের কাছে এই নামেই পরিচিত এই দৈত্যাকার মৎস্য প্রজাতি। সর্বোচ্চ ৫ মিটার বা ১৬ ফুট পর্যন্ত হতে পারে তারা। ইংল্যান্ড তো বটেই, তাছাড়াও জার্মানি, ফ্রান্স, জর্জিয়া-সহ ইউরোপের একাধিক দেশেই দেখা যায় এই মাছের উপস্থিতি। প্রশ্ন থেকে যায়, ইংল্যান্ডের বুক থেকে কীভাবে হারিয়ে গিয়েছিল এই রাজকীয় মৎস্য? 

স্টারজিওন-খ্যাত এই মাছ সাধারণভাবে উপকূলবর্তী সমুদ্রে বসবাস করলেও বংশবিস্তারের জন্য পাড়ি দেয় মিষ্টি জলে। বিশেষ বিশেষ ঋতুতে আটলান্টিক মহাসাগরের নোনা জল থেকে অভিবাসন করে নদীতে। অনেকটা ইলিশ মাছের মতোই। অবশ্য প্রকৃতির এই স্বাভাবিক নিয়মে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সভ্যতার অগ্রগতি। শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই ইংল্যান্ড-জুড়ে গড়ে ওঠে বাঁধ। আর এই বাঁধই রুখে দিচ্ছে স্টারজিওনদের অভিবাসন। বন্ধ করে দিচ্ছে বংশবিস্তারের পথ। তাছাড়া যত কল-কারখানা বেড়ে চলেছে দিনে দিনে, ততই বাড়ছে নদী দূষণের পরিমাণ। পাশাপাশি রাজকীয় মাছ হওয়ার কারণে তার শিকারও চলেছে দেদার। ফলে, বিশ শতকের শেষে ইংল্যান্ডের অধিকাংশ নদী থেকেই স্টারজিওন হারিয়ে যায় চিরতরে। আর সেই কারণেই এই প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রকল্প জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ লন্ডনের। 

না, শুধু রাজকীয় প্রজাতি বলে নয়। নদী ও উপকূলের বাস্তুতন্ত্রের সমীকরণ বজায় রাখতে বড়ো ভূমিকা নেয় স্টারজিওনরা। পাশাপাশি এই মাছকে জীবন্ত জীবাশ্ম বলাও চলে। প্রায় ১০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুকে আগমন ঘটেছিল এই মাছের। ফলে তার ঐতিহাসিক গুরুত্বকেও অস্বীকার করা যায় না মোটেই। বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও গবেষকদের বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে এই মাছের জিন বিশ্লেষণ। এই প্রতিটা আঙ্গিক বিচার করেই নতুন করে স্টারজিওন সংরক্ষণের পথে হাঁটছে ব্রিটেন। জর্জিয়া থেকে নিয়ে আসা হবে বেশ কিছু ‘কিশোর’ স্টারজিওন। তাদের প্রাথমিকভাবে রাখা হবে পরীক্ষাগারে মিষ্টি জলের চেম্বারে। পরে ছেড়ে দেওয়া হবে ইংল্যান্ডের নদীতে। এমনটাই জানাচ্ছে জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ লন্ডন। উল্লেখ্য, এর আগে এই একইধরনের প্রকল্প নিয়েছিল ফ্রান্স ও জার্মানিও। বিগত দু’দশকে সেখানে ইতিবাচক ফলাফল মেলার পর এবার সেই পথেই পা বাড়াল ইংল্যান্ডও… 

Powered by Froala Editor