লকডাউনের গপ্পো ৭

হ্যালো?

তপনবাবু বলছেন?

বলছি। আপনি?

আমি শিবপুর থানা থেকে বলছি। আপনার বিরুদ্ধে একটা কমপ্লেন আছে স্যার।

কমপ্লেন? আমার বিরুদ্ধে?

হ্যাঁ। আপনি লকডাউনের মধ্যেও রোজ মর্নিং এবং ইভনিং ওয়াকে বেরোচ্ছেন।

আই সি। তা কমপ্লেনটা কে করেছে জানতে পারি কি?

সেটা কি খুব জরুরি তপনবাবু? যে বা যাঁরা কমপ্লেন করেছেন তাঁরা আপনার ভালোই চান। আপনি নিশ্চয়ই লকডাউনের গুরুত্বটা বুঝতে পারছেন? কেন খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোতে বারণ করা হচ্ছে, বুঝতে পারছেন নিশ্চই। এই ভাইরাসটা মারাত্মকরকম ছোঁয়াচে। আর আপনার মতো সিনিয়র সিটিজেনদের ক্ষেত্রে এটা ফ্যাটাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই প্লিজ দিনকয়েক আপনার মর্নিং আর ইভনিং ওয়াকটা বন্ধ রাখুন।

না, জানতে চাইছি এই কারণেই যে একেবারে পুলিশ দিয়ে ফোন করাতে হল?

আপনাকে অনেকবার বলা সত্তেও আপনি কথা শুনছেন না। যিনি অভিযোগ করেছেন, তিনি একরকম বাধ্য হয়েই করেছেন।

আপনার নামটা কী যেন বললেন অফিসার?

বলিনি তো।

নামটা জানতে পারি?

নট নেসেসারি। আপনাকে যেটা বললাম প্লিজ একটু মেনে চলুন। আপনার মতো সিনিয়র মানুষদের বড়জোর অনুরোধ করতে পারি। আপনার মতো প্রাজ্ঞ মানুষ যদি এরকম অবুঝের মতো আচরণ করেন, খুবই দুঃখের কথা সেটা।

দেখুন ইন্সপেক্টর, আমি ক্লস্ট্রোফোবিক। ঘরের মধ্যে থাকলে আমার কষ্ট হয়। তাই বাইরে বেরোনোটা আমার জন্যে নেসেসিটি। লাক্সারি নয়।

ক্লস্ট্রোফোবিয়া মানে আমি জানি তপনবাবু। বদ্ধ জায়গায় থাকলে কষ্ট হয়। তার মানে এই নয় যে বাইরে বেরোতে হবে। বিশেষত আপনাদের বাড়িতে যখন ওরকম মস্ত ছাদ রয়েছে। সেখানে ঘুরে বেড়ান যতক্ষণ খুশি।

এক মিনিট, আমার বাড়িতে মস্ত ছাদ আছে আপনি জানলেন কী করে?

ইয়ে… মানে… আপনি এলাকার গণ্যমান্য লোক। আপনাকে কে না চেনে।

আজ্ঞে হ্যাঁ। শুনুন, আরও একটা অভিযোগ আছে। আপনি রোজ বাইরে বেরিয়ে দুটো করে ক্লাসিক খান। সকালে একটা, বিকেলে একটা। এটা চলবে না।

হাউ ডেয়ার ইউ? এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনি এই বাপারে কথা বলার কে?

প্রকাশ্যে স্মোকিং মোটেই ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে বিবেচিত হয় না স্যার। এটা জরিমানাযোগ্য অপরাধ। অনাদায়ে জেল।

শোনো ছোকরা, নিজেকে বেশি চালাক ভেবো না। অনেকক্ষণ ধরে তোমার পেঁয়াজি সহ্য করছি। ভালো চাও তো নিজের পরিচয় দাও। নাহলে কিন্তু আমি থানায় কমপ্লেন করব।

আমার নামে থানায় কমপ্লেন করবেন? বেশ তো। আমার কাছেই বলে দিন। আমি তো থানা থেকেই বলছি।

শাট আপ। আর একটা মিথ্যে কথা বললে চাবকে তোমার পিঠের চামড়া তুলে দেব। আমার এই ভোডাফোন নম্বরটা বাইরের কেউ জানে না। এটা তোমায় বাড়ির কেউই দিয়েছে। কে দিয়েছে সেটাও বুঝতে পারছি। আর তুমি কে সেটাও বুঝতে পারছি। রাস্কেল কোথাকার। আমার সঙ্গে নাটক করা হচ্ছে? নাটক?

অত বার খাবেন না। বুঝতে পেরে এমন কিছু কেল্লা মেরে দেননি। আমি বোঝাতে চেয়েছি বলেই বুঝেছেন। আর বুঝেই যখন গেছেন তখন যা বললাম মেনে চলুন। বাড়ির লোকের কথার নড়চড় করবেন না। অলির থেকে আমি যেন কোনওরকম কমপ্লেন না পাই। আমি পুলিশ না হলে কী হবে, পুলিশে কিন্তু আমার অনেক বন্ধু আছে।

তুমি আমায় থ্রেট করছ? থ্রেট করছ আমায়? জানোয়ার ছেলে! তোমার সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি আমি।

হ্যাঁ, আমি ছোট থেকেই খুব সাহসী। শুনুন, এসব মিটে গেলে একদিন যাব আপনাদের ওখানের পেটাই পরোটা খেতে। আলুর দমটা নাকি ফাটাফাটি করে? আপনি যদি বলেন, আমার মা- বাবাকেও নিয়ে যাব। একেবারে পাকা কথা বলে আসব।

ইডিয়ট! রাস্কেল!

স্নেহ করেই বলছেন, বুঝতে পারছি। যাই হোক, তাহলে ওই কথাই রইল? আচ্ছা বাই দ্য ওয়ে, বিয়ের মেনুতে পেটাই পরোটা রাখলে কেমন হয়?

ইতর! ছোটলোক!