নিউ মেক্সিকো শহরের কাছেই ছিল এক প্রাচীন শহর, পুয়েবলো বেনিতো। চাকো ক্যানিয়নের উপত্যকায় এই শহরে বাস করত এক যাযাবর জাতি। কিছুদিন এই অঞ্চলে বাস করার পর ১১২৬ খ্রিস্টাব্দে আবার অন্যত্র চলে যায় সেখানকার মানুষরা। শহরটাও তলিয়ে যায় মাটির গর্ভে। অবশেষে ১৯২৪ সালে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক মাটির নিচে এই শহর উদ্ধার করলেন। ভগ্নাবশেষ দেখে মুগ্ধ হলেন তাঁরা। মাটির নিচে দাঁড়িয়ে আছে একটি পাঁচ তলার বিশাল প্রাসাদ। প্রাসাদের মধ্যে ১০০টির বেশি ঘর। আর প্রত্যেক ঘরে থরে থরে সাজানো আছে মাটির বাসন, কাঠের তৈরি নানারকম বাদ্যযন্ত্র। প্রাচীন এই যাযাবর জাতির শিল্প আর সংস্কৃতি বোধ দেখে মুগ্ধ হলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের অবাক হওয়ার আরও কিছু বাকি ছিল।
গবেষণার কাজ করতে করতেই হঠাৎ তাঁরা লক্ষ করলেন, প্রাসাদের কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে একটি পাইন গাছ। একটি একলা, অবাক, নির্জন পাইন গাছ। প্রথমে একটি মৃত গাছের কাণ্ড মনে হলেও দেখতে দেখতে সবুজ পাতায় ভরে গেল গাছটি। কিন্তু কোত্থেকে এল এই গাছ? চাকো ক্যানিয়নের আশেপাশে কোথাও কোনো গাছের চিহ্ন নেই। তাছাড়া প্রায় হাজার বছর ধরে মাটির নিচে পড়ে আছে এই শহর। সেখানে এমন একটা গাছকে দেখে স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হল রহস্য। ঠিক কত পুরনো গাছটি? পাবলো যাযাবররাই কি রেখে গিয়েছিলেন এই গাছটি? এমন নানা প্রশ্ন ঘিরে ধরল গবেষকদের। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, প্রায় ১০০ বছর ধরে গবেষণার পরেও তার কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলেন না বিশেষজ্ঞরা।
গাছটিকে ঘিরে গোলাকার প্রাসাদটি এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে, দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন একটা সূর্যঘড়ি। আর সবুজ পাইন গাছটি তার কাঁটা। আবার অনেকের মতে এটা আসলে প্রাচীন জ্যোতিষ শাস্ত্রের জন্মকুণ্ডলীর আকৃতি। নবজাতকের জন্মমৃত্যুর ছক তৈরি করতে এই গাছটি ব্যবহৃত হত। তাই অনেকে এই গাছের নাম দেন, ট্রি অফ লাইফ। অথচ কোনো ব্যাখ্যাই যেন ঠিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকে সমর্থন করে না। হাজার বছর মাটি চাপা পড়ে থাকার পরেও কীভাবে জীবিত আছে গাছটি? এই প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত থেকেই যায়।
চাকো ক্যানিয়নের আশেপাশে কোথাও দ্বিতীয় কোনো গাছের চিহ্ন নেই। তাছাড়া এই পাইন গাছের মূলের গঠন দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়, কোনো দূর দেশ থেকে বয়ে নিয়ে এসে এখানে রোপণ করা হয়েছে গাছটি। তার উদ্দেশ্য বা সময়কাল এখনও জানা যায়নি কিছুই। কিছুদিন আগে অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞের ক্রিস্টোফার গুটারম্যান অবশ্য কোনো কল্পনাতেই আমল দিতে চান না। তিনি গবেষণা করে দেখিয়েছেন, গাছটির বয়স বড়জোর ২৫০ বছর। কিন্তু তার পরেও রহস্যের মীমাংসা হয় কি? প্রায় হাজার বছর আগে মাটির নিচে চাপা পড়ে যায় যে শহর, প্রত্নতাত্ত্বিকরা যে শহরের হদিশ পেয়েছেন মাত্র ১৯২৪ সালে, সেখানে ২৫০ বছর আগে এই গাছ কে রোপণ করেছিল? কেনই বা রোপণ করেছিল? তাছাড়া কোত্থেকে এসেছে এই গাছ? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তরই শেষ পর্যন্ত অজানা থেকে যায়।
এই পৃথিবীতে এমন অনেক রহস্যই থেকে গিয়েছে, আধুনিক বৈজ্ঞানিক মনন যাকে স্পর্শ করতে পারেনি। অবশ্য বিজ্ঞানের অতীত নয় কিছুই। আজ যা ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না, একদিন তার ব্যাখ্যা দেবে বিজ্ঞানই। কিন্তু ততদিন চলবে নিরন্তর গবেষণা। অবশ্য এখন তো আর গাছটির অস্তিত্বও নেই। শুধু তার কিছু দেহাংশ সংরক্ষণ করে রাখা আছে। এর থেকে কি সমাধানের সূত্র পাওয়া যাবে? সেই উত্তর দেবে ভবিষ্যতই।