১১ মিনিটের ‘সমস্যা’য় জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারির, মেয়েরা ছেলেদের প্রেমপ্রস্তাব দিতেন এই দিনে

সমগ্র ইউরোপের ইতিহাসের গতিপথকেই ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিলেন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার। গলদের পরাজিত করে বিশাল রোমান সাম্রাজ্য গঠনের পাশাপাশি সিজার আদেশ দিয়েছিলেন রোমান ক্যালেন্ডারের খোলনলচে বদলে ফেলার জন্যেও। সুতরাং অধিবর্ষের 'নীলনকশা' যে তাঁর হাত ধরেই এসেছিল, সে কথা একদমই খুব ভুল নয়।

আসলে মিশরে থাকাকালীন মিশরীয় সৌর ক্যালেন্ডার তাঁকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এতে বছরে সাধারণত ৩৬৫টি দিন থাকলেও, কখনও কখনও বছরে তার থেকে একদিন বেশি গণনা করা হত। সিজার এবং আলেকজান্দ্রিয়ার দার্শনিক সোসিজিনেস পরবর্তীতে মিশরীয়দের ক্যালেন্ডারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করেছিলেন: শুধুমাত্র নক্ষত্রদের গতিপথের উপর নির্ভর না করে তাঁরা কেবল প্রতি চতুর্থ বছরে একটি বাড়তি দিন যুক্ত করেন। বছরের দ্বিতীয় মাসেই যোগ করা হয় সেই বাড়তি দিনটি। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে এই নয়া জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে পথ চলা শুরু করে।

…তবে খানিকটা ভুল থেকে গিয়েছিল অঙ্কে

১১ মিনিট। হ্যাঁ, সিজারের পদ্ধতি প্রায় সঠিক হলেও, তাতে ১১ মিনিটের হেরফের দেখা যায় সময়ে। সিজারের গণনা অনুযায়ী একটি বছরের স্থায়িত্ব হওয়ার কথা ৩৬৫ দিন ২৫ ঘণ্টা। কিন্তু এক্ষেত্রে ১১ মিনিট বাড়তি সময়, চিন্তায় ফেলে দেয় চার্চকে। কারণ, ইস্টারের দিন ঘোষণায় সমস্যা দেখা দেয় ঘোরতর। অতএব পোপ গ্রেগরি (দ্বাদশ) কিছু সংশোধন করেন জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে। এতে বলা হয়, কোনো বছরকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করা গেলেই একমাত্রর তাকে লিপ ইয়ার বলে গণ্য করা হবে। সংশোধিত রূপ নিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার পরিবর্তিত হয়ে যায় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে।

'লিপ ডে'-তে জন্ম নেওয়া লোকদের বলা হয় 'লিপলিংস'

সারা বিশ্বে প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষ রয়েছেন, যাঁরা ২৯শে ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রতি ১৪৬১ জনের মধ্যে ১জন মানুষের জন্ম লিপ ডে-তে। সেই হিসেবে ভারতের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইও একজন ‘লিপলিংস’।

বিয়ে বা প্রেম প্রস্তাবের সঙ্গে যেভাবে ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছে লিপ ডে…

৫ম শতাব্দীতে আয়ারল্যান্ডে ব্রিজেট নামক এক সন্ত অপর এক সন্ত প্যাট্রিকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন যে, মহিলারা কেন পুরুষদের বিবাহ প্রস্তাব দিতে পারেন না? কিংবদন্তি যে, সেন্ট প্যাট্রিক তখন সিদ্ধান্ত নেন অন্যান্য সময় সম্ভব না হলেও, একমাত্র ২৯শে ফেব্রুয়ারি মহিলারা পুরুষদের প্রস্তাব দিতে পারবেন। লিপ ডে এভাবেই কিছু জায়গায় পরিচিতি লাভ করে 'ব্যাচেলর ডে' হিসাবেও।

এই ট্র্যাডিশনের ঢেউ এসে পড়েছিল আইরিশ সাগর পেরিয়ে স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডেও। এক্ষেত্রে ব্রিটিশরা একটা আলাদা মোড় দেন পুরো ব্যপারটিতে। যদি কোনো পুরুষ কোনো মহিলার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে না পারেন, তবে সেই মহিলাকে বেশ কয়েক জোড়া গ্লাভস উপহার দিতে হবে তাঁকে। সম্ভবত মহিলাদের হাতে বাগদানের চিহ্ন হিসেবে কোনো আংটি নেই, সেই লজ্জা বা খামতি থেকে তাঁকে মুক্তি দিতেই এই রীতি চালু করা হয় বলে ধারণা। যদিও গ্রিক রীতিতে ২৯শে ফেব্রুয়ারি বিয়ে করা দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারে বলে মনে করা হত এবং এখনও সেই ট্র্যাডিশন সমানে বহমান।

More From Author See More