এই প্রথম অ্যাবেল পুরস্কারে সম্মানিত একজন নারী, উল্লসিত বিজ্ঞান মহল

অঙ্ক— কারোর কাছে নেশা, আবার কারোর কাছে ত্রাসের আরেক নাম। সেই কবে থেকে অঙ্ক নিয়ে সাধ্য সাধনা করে এসেছেন গণিতজ্ঞরা। তাদের অবদানের জন্য দেওয়া হয় অ্যাবেল পুরস্কারও। অঙ্কের নোবেল হিসেবে যার পরিচয়। কিন্তু এতদিন নারীবর্জিত ছিল এই পুরস্কার। এই প্রথম একজন মহিলা গণিতজ্ঞের হাতে উঠল অ্যাবেল পুরস্কার। কারেন কেসকুল্লা উলেনবেক সাক্ষী থাকলেন ইতিহাসের।

বিজ্ঞান, সাহিত্য, শান্তি, অর্থনীতি- এই বিষয়গুলোয় অবদান রাখার জন্য ১৯০১ সাল থেকে দেওয়া হয় নোবেল পুরস্কার। কিন্তু এই তালিকায় অঙ্ক কখনও আসেনি। এই ব্যাপারটাই তুলে ধরেন সোফাস লাই বলে নরওয়ের একজন গণিতজ্ঞ। তাঁরই ভাবনা অনুযায়ী ঠিক হয়, ১৯০২ সাল থেকে অঙ্কে অবদানের জন্য পৃথক একটি পুরস্কার দেওয়া হবে। নরওয়ের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ নিলস হেনরিক আবেলের জন্ম শতবর্ষ স্মরণের জন্য তাঁরই নামে নামাঙ্কিত হয় এই পুরস্কার। কিন্তু ওই সময়ই মারা যান সোফাস লাই। এরপর অ্যাবেল পুরস্কারের প্রস্তাব চাপা পড়ে যায়। পরে, আবেলের জন্মের ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে নরওয়ে সরকার ২০০২ সাল থেকে এই পুরস্কারের সূচনা করেন। কালে কালে যা ‘অঙ্কের নোবেল হিসেবে পরিচিতি পায়।

১৯৪২ সালে কারেন উলেনবেকের জন্ম আমেরিকার ওহায়োর ক্লিভল্যান্ডে। ছোটবেলা থেকেই নির্জনতা প্রেমী তিনি। ভালোবাসতেন বই পড়তে। সেখান থেকেই পদার্থ বিদ্যা ও গণিতের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় অনার্স, আমেরিকার ব্র্যান্ডাইস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে মাস্টার্স ও ১৯৬৮ সালে ডক্টরেট করেন। তবে এতকিছু করেও চলার পথটি খুব একটা সহজ ছিল না। ১৯৬৫ সালে কারেন যখন ওলকে উলেনবেককে বিয়ে করেন, সেই সময় কোনো স্বামী-স্ত্রী একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বা গবেণাগারে চাকরি করতে পারতেন না। স্ত্রীকে শিক্ষকতা বা গবেষণা ছাড়তে হত, অথবা বিবাহবিচ্ছিন্ন হতে হত একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার জন্যে। এই কারণেই কারেনকে এমআইটি ও ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় আরবানা-শ্যাম্পেন-এর শিক্ষকতা ছাড়তে হয়েছিল। পরে অস্টিনে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্কের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। কর্মজীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সেখানেই শিক্ষকতা করে গেছেন। গাণিতিক বিশ্লেষণের জগতে কারেনের অবদান অবিস্মরণীয়। মূলত তাঁকেই ওই বিধয়ের একজন পথিকৃৎ ধরা হয়। গাণিতিক বিশ্লেষণে বিশেষ অবদানের জন্যই ২০১৯-এর অ্যাবেল পুরস্কার পান তিনি। শুধু নিজের জন্য নয়, তাঁর এই পুরস্কার গোটা বিজ্ঞান জগতের এক মাইলফলক। প্রথম মহিলা অ্যাবেল জয়ী শুধুই নয়; একজন উল্লেখযোগ্য গণিতজ্ঞ হিসেবে, জীবনযুদ্ধের এক মুখ হিসেবে তাঁর স্থান নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।