কবিতাকে হাতিয়ার করে বিপন্ন ভাষা-সংরক্ষণ, নেপথ্যে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল পোয়েট্রি লাইব্রেরি

ভাষাবিদদের মতে সাহিত্য, নাটক কিংবা সিনেমাই সাধারণ মানুষকে কোনো ভাষাকে ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করে। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায়, কোনো ভাষায় রচিত সৃজনশীল শিল্পই সেই ভাষাকে অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচায়। ঠিক এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিলুপ্তপ্রায় ও বিপন্ন ভাষাদের (Endangered Languages) সংরক্ষণ করতে কবিতাকে হাতিয়ার করে নিয়েছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল পোয়েট্রি লাইব্রেরি (National Poetry Library)।

বছর পাঁচেক আগের কথা। ২০১৭ সাল। ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখটিকে জাতীয় কবিতা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার। আয়োজিত হয় আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবও। তবে এই উৎসবে মূলত বিশ্বজুড়ে বিপন্ন ভাষাদের সংরক্ষণই প্রধান লক্ষ্য ছিল ব্রিটেনের ন্যাশনাল পোয়েট্রি লাইব্রেরির। অ্যাসিরিয়ান থেকে আইরিশ গ্যালিক— বিশ্বজুড়ে সহস্রাধিক ভাষার নাম তালিকাবদ্ধ করা হয় এই উৎসবের জন্য। এইসকল ভাষায় লেখা জনপ্রিয় কবিতার অনুবাদ জমা দেওয়ার আবেদন রাখা হয় তরুণ প্রজন্মের কাছে। 

অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ন্যাশনাল পোয়েট্রি লাইব্রেরির এই উদ্যোগে। তবে তালিকাবদ্ধ সমস্ত ভাষার প্রতিনিধিদের থেকে সমানভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি। যে-সকল ভাষার কবিতা ও অনুবাদ জমা পড়েছিল, তা নিয়েই সে-বছর প্রাথমিকভাবে গড়ে ওঠে একটি ভার্চুয়াল আর্কাইভ তৈরি করে ন্যাশনাল পোয়েট্রি লাইব্রেরি। বিগত পাঁচ বছরে ক্রমশ বেড়েছে সেই আর্কাইভের আয়তন। বেড়েছে সংরক্ষিত কবিতা ও অনুবাদের সংখ্যা। শুধু বাৎসরিক অনুষ্ঠানই নয়, সঙ্গে প্রতি মাসেই বিভিন্ন বিপন্ন ভাষা কবিতা ও নাটক নিয়ে বিশেষ পত্রিকাও প্রকাশ করে ন্যাশনাল পোয়েট্রি লাইব্রেরি। বছরভর আয়োজিত হয় কবিতা রচনা এবং অনুবাদের নানা প্রতিযোগিতা। লক্ষ্য, আগামী এক দশকের মধ্যে বিশ্বের ৭০০০ ভাষার অন্ততপক্ষে একটি করে কবিতা সংগ্রহ করা এই আর্কাইভে। 

ইউনেস্কোর রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি ২ সপ্তাহে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যায় একটি করে ভাষা। অর্থাৎ, হিসেব করলে, চলতি শতাব্দীর শেষে অস্তিত্ব হারাবে অর্ধেকের বেশি ভাষাই। সেখানে দাঁড়িয়ে ন্যাশনাল পোয়েট্রি লাইব্রেরির এই উদ্যোগ আশা জাগাচ্ছে বিপন্নপ্রায় ভাষাদেরও ফিরিয়ে আনা সম্ভব অবলুপ্তির মুখ থেকে…

Powered by Froala Editor