দূষণ ঠেকাতে সিগারেটের ফিল্টার সংগ্রহ, পথ দেখাছেন বাংলার সংরক্ষণকর্মী

ধূমপান স্বাস্থ্য পক্ষে বিপজ্জনক। টেলিভিশন, থিয়েটার এমনকি সিগারেটের প্যাকেট— সর্বত্রই বলা হয় এই সাবধানবাণীর কথা। কিন্তু শুধুই কি তার ক্ষতিকর প্রভাব ব্যক্তিগত পরিসরে সীমাবদ্ধ? ধূমপায়ীর সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে পরিবেশেও। প্যাসিভ স্মোকিং তো আছেই। তাছাড়াও সিগারেটের বাট (Cigarette Butts) প্লাস্টিকের মতোই মৃত্তিকা ও জলদূষণের জন্য দায়ী। এই দূষণ রোধ করতেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলার প্রাক্তন আইটি প্রকৌশলী তথা পরিবেশকর্মী নিরিত দত্ত (Nirit Dutta)। 

তুলো এবং কাগজের মোড়কেই তৈরি হয় সিয়ারেটের বাট। ফলে, প্রাথমিকভাবে তাকে পরিবেশবান্ধব বলে মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তবে সিগারেটের বাটের তুলোয় থাকে সেলুলোজ অ্যাসিটেট। যা মাটির সঙ্গে ভারি ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে ভয়াবহ দূষণের কারণ হয়ে ওঠে। এই সমস্যার সমাধান করতেই সিগারেট বাট সংগ্রহ এবং তাদের পুনর্ব্যবহারের উদ্যোগ নেন নিরিত। বলতে গেলে, এটাই ছিল ভারতে এই ধরনের প্রথম কোনো উদ্যোগ। 

জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায় হলেও, কর্মসূত্রে বর্তমানে গোয়ার বাসিন্দা নিরিত। তবে এই কলকাতা শহরের বুকেই শুরু হয়েছিল তাঁর দূষণ রোধের লড়াই। ২০২১ সালের এপ্রিল মাস সেটা। শুরু করেছিলেন ‘প্রোজেক্ট বাটরাশ’। লক্ষ্য ছিল, পথে পড়ে থাকা সিগারেটের ফিল্টার সংগ্রহ। সেসময় সঙ্গী বা সহকর্মী ছিল না কেউ-ই। কারোর অপেক্ষা না করে একাই পথে নেমেছিলেন তিনি। রাত ১টা থেকে পরদিন রাত ১টা— টানা ২৪ ঘণ্টা ধরে কলকাতার বুকে চলেছিল অভিযান। এমনকি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সিগারেটের বাট সংগ্রহের জন্য বিশ্ব রেকর্ডও তৈরি করেছিলেন ভারতের প্রথম কনজারভেশন টেক ইভাঞ্জেলিস্ট নিরিত। 

কলকাতার পর মুম্বাই, মাইসোর, বেঙ্গালুরু, দিল্লি এবং নয়ডাতেও একই ধরনের অভিযান চালিয়েছেন নিরিত। সেইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে প্রচারাভিযানও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে না উঠলে এই সমস্যার সমাধান হওয়া অসম্ভব বলেই মনে করেন নিরিত। তবে আজ এই লড়াইয়ে তিনি একা নন। ভারতের নয় রাজ্যেরও ২৮৮ জন স্বেচ্ছাসেবী আজ ‘প্রোজেক্ট বাটরাশ’-এর সদস্য। সম্মিলিতভাবে ৩০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করা যাঁরা এখনও পর্যন্ত সংগ্রহ করেছেন ৩ লক্ষাধিক সিগারেট বাট। 

আরও পড়ুন
পরিবেশ ও বিদ্যুৎ বাঁচাতে সৌরশক্তি-চালিত এসি, পথ দেখাচ্ছেন দিল্লির বিজ্ঞানী

তবে শুধু পরিবেশরক্ষা বা সচেতনতাবৃদ্ধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই ‘বাটরাশ’-এর কর্মকাণ্ড। ব্যবহৃত সিগারেট ফিল্টারের পুনর্ব্যবহার এবং দূষণের ওপরেও রীতিমতো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে এই অলাভজনক সংস্থা। এই প্রয়াস কুর্নিশযোগ্য তো বটেই…

আরও পড়ুন
সুপারি পাতা থেকে পরিবেশবান্ধব বাসন, দিনবদলের স্বপ্ন ‘দৃষ্টিহীন’ ভারতীয়ের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বিশ্বের বৃহত্তম দেশ, প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশও; কেন ‘অজেয়’ রাশিয়া?