দলিত ও আদিবাসী পড়ুয়াদের জন্য ১২,২৫০টি স্টাডি রুম উদ্বোধন কেরালায়

সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই যত এগিয়েছে, ক্রমশ শিক্ষার আলো পেয়েছে দলিত ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ। অথচ প্রথাগতভাবে শিক্ষার সুযোগ পেলেই কি উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যায়? যে পরিবারে ইতিপূর্বে কেউ স্কুলে যায়নি, সেখানে একজন প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়ার লড়াইটা সত্যিই কঠিন। তবে এর মধ্যেই আশার আলো দেখাচ্ছে কেরালা সরকারের নতুন উদ্যোগ। সারা রাজ্যে তফশিলি জাতি ও উপজাতির পড়ুয়াদের জন্য ১২২৫০টি স্টাডি রুম উদ্বোধন করল সরকার। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে এই উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।

রাজ্যের তফশিলি জাতি ও উপজাতি মন্ত্রী একে বালানের কথায়, সর্বশিক্ষা অভিযানের সাফল্য এবং অন্যান্য সরকারি উদ্যোগের সফল প্রয়োগের ফলে অনেক পরিবারই তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু শুধু স্কুলের মধ্যেই শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না। বাড়িতে ফিরে নিজের মতো পড়ার সুযোগ থাকে না অনেকেরই। কোথাও গাদাগাদি করে একটা ঘরের মধ্যেই থাকেন সমস্ত মানুষ, কোথাও আবার ঘরে ফিরলেই সংসারের কাজে লেগে যেতে হয়। এরকম পরিস্থিতিতে পড়াশোনা প্রায় অসম্ভব। তাই তাদের জন্য আলাদা ঘরের প্রয়োজন।

আজও সমাজে দলিতদের নিজস্ব জমি কেনার কোনো অধিকার নেই অনেক জায়গাতেই। অথচ তার মধ্যেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই ছাড়তে রাজি নন অনেকেই। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কথায়, কিছু বছর আগেই কমিউনিটি স্টাডি রুম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু এর ফলেও সমস্যার সার্বিক সমাধান হয়নি। ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে প্রত্যেকের জন্য নিজেদের ঘর দরকার। আর তাই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ২ কোটি টাকার এই প্রকল্প শেষ পর্যন্ত সফল হবে বলেই বিশ্বাস তাঁর।

এই করোনা পরিস্থিতিতে যখন সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ, তখন পড়াশোনার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন অনেকেই। এর মধ্যেই কেরালা সরকারের এই উদ্যোগ তাদের আবার শিক্ষার স্রোতে ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করা যায়। পড়াশোনার জন্য বইয়ের পাশাপাশি ইন্টারনেট এবং কম্পিউটারের ব্যবস্থাও সরকারই করবে। আর এই ১২২৫০টি স্টাডি রুমের পর আগামী বছরের মধ্যেই আরও ৮৫০০টি স্টাডি রুম তৈরি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি যেসব আদিবাসী মহল্লায় পড়ুয়াদের জন্য আলাদা স্টাডি রুম তৈরি করা সম্ভব হয়নি, সেখানে ২৫০টি কমিউনিটি স্টাডি রুম তৈরি করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই জাতিবিদ্বেষী সমাজে সরকারের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এভাবে হাতে হাত রেখেই তো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সমাজকে।

আরও পড়ুন
লকডাউনে খাদের কিনারায় দলিত, মুসলিম এবং আদিবাসীরা, পৌঁছোয়নি ত্রাণও; প্রকাশ সমীক্ষায়

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
উচ্চবর্ণের বাগানের গাছে হাত দিয়েছে দলিত বালিকা, বয়কটের মুখে ৪০টি পরিবার