বিলুপ্তির মুখে পেশা, দুশ্চিন্তায় কাশ্মীরের ইয়াক-হার্ডাররা

ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার মিটার উঁচুতে হিমালয়ের বরফে ঢাকা উপত্যকা। তার দেয়াল বেয়েই উঠে যাচ্ছেন বয়সে ভারে ন্যুব্জ একদল মানুষ। সঙ্গে একপাল চমরি গরু। তাঁদের মধ্যেই আছেন ফুনসোং সেরিং। আক্ষেপের সুরে বলেন, তাঁর পরিবারে তিনিই শেষ ইয়াক-হার্ডার। একই আক্ষেপ দলের অন্যান্যদেরও। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তো তাঁদের এভাবেই যাযাবর জীবন কেটেছে। তবে এখন আর কেউই প্রাচীন এই পেশায় আসছেন না। যাঁরা থেকে গিয়েছেন, তাঁদের কাছে এটা তো শুধুই একটা জীবিকা নয়। এ তাঁদের জীবনধারা।

লাদাখ উপত্যকা ও তার আশেপাশের এলাকাও এখনও চোখে পড়বে ইয়াক হার্ডারদের। তবে এখন তাদের সংখ্যা সব মিলিয়ে ১০০-র কম। একসময় চমরি গরুই ছিল কাশ্মীরের অর্থনীতির অন্যতম ভিত। ইয়াক হার্ডাররা একপাল গরু নিয়ে সারা বছর পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায়। শীতের শেষে আর গ্রীষ্মের শুরুতে তাদের লেজের চুল এবং গায়ের লোম তুলে নেয়। তারপর সেই লোম থেকে তৈরি কার্পেট বা সোয়েটার আসে শহরের বাজারে।

বরফে ঢাকা পার্বত্য অঞ্চলে বিপদ পায়ে পায়ে। প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে কোনোরকমে বেঁচে থাকেন। কখনও দীর্ঘ শীতকালে খাবার অথবা জল কিছুই জোটে না। কয়েক মুহূর্তের জন্য আগুন জালিয়ে জল তৈরি করা হয়। তবে তার মধ্যেও একটা নিরাপত্তা আছে। সে নিরাপত্তা এই যে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষ তো এভাবেই বেঁচে আছে। আজকের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা কিন্তু আর এই ঐতিহ্যকে আঁকড়ে থাকতে রাজি নন। হয়তো আর কয়েক দশকের মধ্যেই প্রাচীন কাহিনিতে পরিণত হবেন ইয়াক হার্ডাররা। তবে এ তো শুধু একটি জীবিকার ইতি নয়। একটা শিল্পেরও শেষ। ইয়াক হার্ডাররা না থাকলে শহরের বাজারেও কি কার্পেট, সোয়েটার আসবে?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
শব্দ নয়, শিস দিয়েই ভাব বিনিময় করেন তাঁরা; অবলুপ্তির পথে তুরস্কের ‘পাখি ভাষা’

More From Author See More