কম খরচে ভেন্টিলেটর তৈরি করে বিশ্বদরবারে স্বীকৃতি যাদবপুরের দুই পড়ুয়ার

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে কাবু গোটা পৃথিবী। সংক্রমণের সংখ্যা যেভাবে আকাশ ছুঁয়েছে, তাতে ভেন্টিলেটরের চাহিদাও বাড়ছে দিনকেদিন। কিন্তু এত ভেন্টিলেটর পাওয়া যাবে কোথায়? তাও ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে? এই সমস্যা সমধানের রাস্তা দেখিয়েই, তাক লাগাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পড়ুয়া।

কোভিড-১৯ এর মহামারী ঠেকাতে সহজ সমাধান কী হতে পারে? এই চিন্তাভাবনা নিয়েই একটি অনলাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল সেন্টার অফ এমারজিং এন্ড নেগলেক্টেড ডিসিসেস (CEND)। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলিতে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় সামিল ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও। অংশগ্রহণকারী যাদবপুরের দুই পড়ুয়া তৈরি করল কম খরচের ভেন্টিলেটর।

অন্বেষা ব্যানার্জি এবং অচল নিলহানি, দুই পড়ুয়াই বর্তমানে যাদবপুরে তৃতীয়বর্ষে পাঠরত। ইলেকট্রনিক্স এবং টেলিকম্যিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। প্রতিযোগিতায় তাঁদের তৈরি করা ভেন্টিলেটর আয়োজকদের দ্বারা গৃহীত হল। পুরস্কৃত হল আন্তর্জাতিক মঞ্চে। বলাই বাহুল্য, এই সাফল্যে আনন্দিত পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। শুভেচ্ছাবার্তা পাঠালেন উপাধ্যক্ষ।

ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন মোট শিক্ষক, গবেষক, পড়ুয়া মিলিয়ে মোট ৮৪ জন। ৬ জনের এক একটি দল গঠন করা হয়েছিল। জমা পড়া ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে সেরা হিসাবে নির্বাচিত হয় স্বল্প দামের এই ভেন্টিলেটরের প্রোজেক্টটি। ওই দুই পড়ুয়া ছাড়াও দলে ছিলেন আরও ৪ জন। ভেন্টিলেটরের মূল নকশা এবং প্রযুক্তিগত বিকাশের দায়ভার ছিল অন্বেষা এবং অচলের উপরে। বাকিরা ৪ জন এর ভবিষ্যৎ ব্যবহারের রূপরেখা তৈরি করেন। বাস্তবায়ন করেন এই গবেষণার।

এই ভেন্টিলেটরের দাম ধার্য করা হয়েছে মাত্র ৩০০ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, ২১ হাজার ভারতীয় মুদ্রা। যেখানে প্রচলিত ভেন্টিলেটরগুলির এক একটির জন্য খরচ পড়ে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। কোভিড-১৯ মহামারীর যুদ্ধে ভেন্টিলেটর যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র, তা বলার অপেক্ষা থাকে না। অল্প খরচে এই ভেন্টিলেটর বাজারে এলে প্রাণ বাঁচবে বহু মানুষের। খরচ কম হওয়ায় হাসপাতালগুলিতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যাবে এই যন্ত্র। এমনটাই জানিয়েছে, বিহারে পাটনার বাসিন্দা অচল নিলহানি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ সুরঞ্জন দাস জানান, আমেরিকাতে একাধিক এই জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। এমন একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় এই ফলাফলে গর্বিত তিনি। ছিল না সকলের একত্রিত হয়ে কোনো গবেষণার সুযোগও। কেবলমাত্র ‘জুম’ ভিডিও কলের মাধ্যমে আলোচনায় তৈরি করে ফেলা এই নিখুঁত কাজ, যথেষ্ট কঠিন। এ যেন অসাধ্যসাধন।

বিজয়ী দল হিসাবে ১০০০ মার্কিন ডলারের পুরস্কার পেয়েছে অন্বেষা এবং অচলের দল। তাঁদের তৈরি এই কাজ নিয়ে নতুন করে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে আমেরিকার বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেসকদল। প্রচেষ্টা করা হচ্ছে নতুন প্রযুক্তির সংযোজনের। খুব দ্রুতই হাসপাতালে ব্যবহার করা হবে এই যন্ত্র, জানান বিশেষজ্ঞরা। বাণিজ্যিকভাবে যাতে বাজারে আসতে পারে এই যন্ত্র, কাজ চলছে তার উপরেও। এই আবিষ্কার যে সারা পৃথিবীর চিকিৎসা বিভাগকে সাহায্য করবে, তা বলার অপেক্ষা থাকে না।