বস্তি থেকে ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটি, ‘জয়’যাত্রা অব্যাহত

ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয় – এই প্রবাদটাই যেন সত্যি করে দেখালেন মুম্বাইয়ের কুরলা বস্তির জয় কুমার বৈদ্য। এমনও দিন গেছে, যখন তাঁর মা স্কুলের বেতন দিতে পারেননি বলে স্কুল তার রেজাল্ট আটকে রেখেছিল। সেই জয়ই এখন ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট করছেন। প্রতিকূলতার ভয়ে পিছিয়ে আসেননি তিনি তিনি কোনোদিনই।   

বস্তির একটা ছোট্ট ঘর। ৮×১০ স্কোয়ার ফিটের। থাকেতেন তিনজন। জয়, তাঁর মা নলিনী দেবী ও তাঁর দিদা। শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো নলিনী দেবীকে। স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায়। বিপদ এখানেই থামেনি। হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পরেন নলিনী দেবীর মা। ক্লার্কের চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয় তাঁকে। এত কিছুতেও থেমে যাননি নলিনী দেবী। জয়ের কথায়, তাঁদের দিন কেটেছে চা, পাউরুটি, বড়া পাও আর সিঙাড়া খেয়ে।

আত্মীয়রা বিপদের দিন সাহায্য করেননি। বরং সাহায্য এগিয়ে এসেছে এমইএসকো ট্রাস্ট এবং মন্দির ট্রাস্ট থেকে। মন্দির ট্রাস্ট থেকে তাঁরা পেয়েছিলেন রেশনের খাবার ও পুরানো জামাকাপড়, এনইএসকো ট্রাস্ট জয়ের স্কুলের বেতন ও কলেজে পড়ার সময় তাঁদের সুদ ছাড়া ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।

বস্তির অন্যান্য পরিবারের টিভিতে জয় স্পেস মুভি দেখেছিলেন। আর দেখেছিলেন ডিসকভারি চ্যানেল। ছোট্ট শিশুটির মনে বিজ্ঞান নিয়ে কৌতুহল জাগাবার জন্য ওইটুকুই যথেষ্ট ছিল। এরপর প্রতিকূলতা আর পরিশ্রম সঙ্গে নিয়েই পাস করলেন ইঞ্জিনিয়ারিং, কে জে সোমাইয়া কলেজ থেকে। এরপর রিসার্চার হিসেবে যোগ দেন টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চে। রিসার্চার থাকাকালীনই ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দুটি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নালও প্রকাশ করেন তিনি।

টাকার প্রয়োজনে অনলাইন কোচিং-এও পড়িয়েছেন জয়। করেছেন অন্যান্য পড়ুয়াদের অ্যাসাইনমেন্টও। বর্তমানে ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে গবেষণা করছেন। পাচ্ছেন ২০০০ ডলার স্টাইপেন্ট। দারিদ্র্য এখন পিছু ছেড়ে দিয়েছে। পিএইচডি-র পর তিনি চান ভারতে তাঁর নিজস্ব একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে। চান প্রযুক্তিবিদ্যায় ভারত স্বনির্ভর হোক। আর চান তাদের সাহায্য করতে, যারা তাঁরই মতন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করছে আর স্বপ্ন দেখছে সাফল্যের।