লোহার সঙ্গে মিশে আছে অন্যান্য ধাতুও, পৃথিবীর কেন্দ্রের খোঁজে সাফল্য বিজ্ঞানীর

জুল ভার্নের 'জার্নি টু দ্য সেন্টার অফ আর্থ' উপন্যাসটির কথা মনে আছে নিশ্চই। কিছুদিন আগেই হলিউডের সৌজন্যে যে উপন্যাসের কাহিনি শিশুদের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। মাটির অনেক নিচে, পৃথিবীর কেন্দ্রের কাছে চাপা পড়ে আছে অতীত দিনের নানা চিহ্ন। সেখানে ঘুরে বেড়ায় হিংস্র ডাইনোসরের দল। তবে বাস্তবেও কি পৃথিবীর কেন্দ্রের চেহারা এমনই? বিজ্ঞানীরা উত্তর দেবেন, না। পৃথিবীর কেন্দ্রে প্রবল চাপে আর উষ্ণতায় কোনো চিহ্নই আর টিকে থাকতে পারে না। জীবন্ত প্রাণী তো অনেক দূরের কথা। তাহলে কী আছে সেখানে?

পৃথিবীর কেন্দ্রে কী আছে, তার স্পষ্ট উত্তর এখনও জানেন না বিজ্ঞানীরা। সিসমিক যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করে কিছু সম্ভবনার সূত্র অবশ্য পেয়েছেন তাঁরা। সেখানে প্রবল চাপে আর উষ্ণতায় রয়েছে তরল লোহা। হ্যাঁ, উষ্ণতা সেখানে এতটাই বেশি যে লোহা গোলে তরল হয়ে যায়। কত উষ্ণতা? ৪৩৫০ কেলভিন। অর্থাৎ সাধারণ ঘরের উষ্ণতার ১৬ গুন। আর সেখানে পরিপার্শ্বের চাপ ১১৬ গিগাপাসকাল। জলের চাপের তুলনায় যা ১০ গুন বেশি। কিন্তু সেখানে কি শুধুই লোহা আছে? নাকি আরও কিছু উপাদান মিশে আছে তার সঙ্গে?

পৃথিবীর কেন্দ্রের উপাদান কী, এ নিয়ে দীর্ঘ মতানৈক্য চলেছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। লোহার সঙ্গে আরও কিছু মিশে থাকার সম্ভবনাই যে বেশি, একথা মনে করতেন অনেকে। তবে তার কোনো স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি এতদিন। অবশেষে সেই প্রমাণ খুঁজে বের করলেন জাপানের বিজ্ঞানী কুয়াওয়ামা। পৃথিবীর কেন্দ্রের বহিঃস্তর অর্থাৎ আউটার কোর থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করে দেখতে চাইলেন তিনি। কাজটা রীতিমতো কঠিন। তবে টানা দুই দশক ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমে এগিয়ে নিয়ে চললেন গবেষণার কাজ। নমুনা পরীক্ষার জন্য রিরে দিয়ে তৈরি করলেন নেহাই। হিরের দিয়ে নেহাই তৈরি হওয়ায় সহজেই এক্স-রের সাহায্যে পরীক্ষা করা যাবে। সেইসঙ্গে উপাদানের ঘনত্বও বোঝা যাবে।

এক্স-রে পরীক্ষার ফলাফল এখনও হাতে পাননি কুয়াওয়ামা। তবে উপাদানের ঘনত্ব পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তরল লোহার তুলনায় সামান্য কম ঘনত্ব তার। অর্থাৎ লোহার সঙ্গে অন্যান্য কিছু হালকা ধাতু যে মিশে আছে, সেকথা নিঃসন্দেহে বলা যায় এবার। গবেষণার কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই জানা যাবে, ঠিক কোন কোন উপাদান দিয়ে তৈরি পৃথিবীর কেন্দ্র। এমন ঐতিহাসিক গবেষণার দিকে তাকিয়ে সকলেই। সেইসঙ্গে এই গবেষণার সাফল্য ভবিষ্যতে অন্যান্য গ্রহের উপাদান বুঝতেও সাহায্য করবে বলে আশাবাদী কুয়াওয়ামা।