মাটির দেওয়ালই ব্ল্যাকবোর্ড, প্রান্তিক ঝাড়খণ্ডকে দিশা দেখাছেন স্কুল শিক্ষক

মাটির দেওয়ালে আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে তৈরি হয়েছে ব্ল্যাকবোর্ড। কোথাও আবার লাল-নীল হরফে লেখা আছে ইংরাজি, হিন্দি অক্ষর, ইংরাজি শব্দের হিন্দি অর্থ কিংবা মানবদেহের গঠন ও বিভিন্ন অঙ্গের ছবি। এই দেওয়ালের সামনে বসেই পড়াশোনা করছে গুটিকয়েক শিশু।

২০২০ সালের কথা। ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) দুমকার দুমথা গ্রামের এই ছবি সে-সময় ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর, দীর্ঘদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দেশের স্কুল-কলেজ। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই হেঁটেছিল অনলাইন এডুকেশনের রাস্তায়। কিন্তু প্রান্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা? তাদের কাছে না আছে স্মার্ট ফোন, না আছে ইন্টারনেট সংযোগ। তবে কি তারা শিক্ষা থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ব্রাত্যই থেকে যাবে? 

না, চুপ করে বসে থাকতে পারেননি তিনি। লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছিলেন দুমথা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অধ্যক্ষ ডঃ স্বপন পত্রলেখ (Sapan Patralekh)। সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগেই গ্রামের অধিকাংশ মাটির বাড়ির দেওয়ালকেই বদলে ফেলেছিলেন ব্ল্যাক বোর্ডে। শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে নিজেই পৌঁছে গিয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীদের কাছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে মাস্ক পরেই চলত পঠন-পাঠন। 

আসলে শিক্ষার গুরুত্ব কী, তা নিজের জীবনে প্রতি পদে উপলব্ধি করেছেন ঝাড়খণ্ডের শিক্ষক। কৈশোরেই হারিয়েছিলেন বাবা-মাকে। সে-সময় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল আত্মীয়রাও। এক বন্ধুর বাড়িতেই বড়ো হয়েছেন তিনি। তবে পড়াশোনার জন্য নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। সেইসঙ্গেই চলেছে অর্থ উপার্জনের সংগ্রাম। হিন্দি সাহিত্যে পিএইচডি করার পর, মোটা অঙ্কের বেতন পাওয়ার সুযোগ থাকলেও তাই গ্রামেই ফিরে এসেছিলেন তিনি। কাজ নিয়েছিলেন সামান্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তাই লকডাউনে পড়াশোনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে ছাত্রছাত্রীরা, এটা মেনে নেওয়াই কঠিন হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে। 

গত বছর লকডাউনের শিথিল হওয়ার পর দেশের সমস্ত প্রান্তেই ধীরে ধীরে খুলেছে স্কুল-কলেজ। অন্যথা হয়নি ঝাড়খণ্ডের দুমথা গ্রামেও। তবে গ্রামের খুদে পড়ুয়ারা ক্লাসে ফিরলেও, ফাঁকা পড়ে নেই মহামারীর সময়ে মাটির দেওয়ালের উপর বানানো ব্ল্যাকবোর্ডগুলি। বর্তমানে সেখানেই ক্লাস চলছে প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রবীণদের। ডঃ স্বপন পত্রলেখ তো বটেই, তাঁর ছোট্ট ছোট্ট শিক্ষার্থীরাও পাঠ দিচ্ছে তাদের নিরক্ষর বাবা-মা কিংবা দাদু-দিদাকে। এবং আশ্চর্যের বিষয় হল, তাঁরাও রীতিমতো নিয়ম করেই হাজির হন নতুন কিছু শেখার নেশায়। বলতে গেলে ডঃ স্বপন পত্রলেখর এই উদ্যোগ ঝাড়খণ্ডের এই গ্রামের চেহারাই বদলে দিয়েছে সম্পূর্ণভাবে। ভবিষ্যতে এই মডেলই নতুন দিশা দেখাবে প্রান্তিক শিক্ষাব্যবস্থাকে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

Powered by Froala Editor